শনিবার ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২ ভাদ্র ১৪৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:৫১, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রাজনীতি রাজপথের কর্মসূচিতে যাচ্ছে এনসিপি

রাজনীতি রাজপথের কর্মসূচিতে যাচ্ছে এনসিপি
সংগৃহীত

চলতি সপ্তাহেই চূড়ান্ত হচ্ছে বহুল আলোচিত ‘জুলাই সনদ’। তবে এতে মৌলিক সংস্কার কতটা ও কীভাবে প্রতিফলিত হবে, সে দিকে কড়া নজর রাখছে জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

দলটির মতে, সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে নতুন জটিলতা তৈরি হচ্ছে। গণহত্যার বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতি ধীরগতি বলেও মনে করছে তারা। সংস্কার ও বিচারের সমাধান না করেই অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে—যা নিয়ে এনসিপির তীব্র আপত্তি রয়েছে। নতুন সংবিধান প্রণয়ন নিয়েও অনিশ্চয়তার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এনসিপির অনেক নেতার মতে, সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো নির্দিষ্ট কিছু দলের পক্ষে যাচ্ছে। এতে জুলাই বিপ্লবের মূল আকাঙ্ক্ষা ভূলুণ্ঠিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। একইসঙ্গে নতুন করে ফ্যাসিবাদী শক্তির উত্থানের আশঙ্কাও দেখছে দলটি। ফলে টেবিলের আলোচনার পাশাপাশি রাজপথে আন্দোলনের কর্মসূচিতে নামতে চলেছে তারা।

দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়নে যে ধোঁয়াশা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তা টেবিল আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে বলে আমরা আশাবাদী। কিন্তু যদি কোনো গাফিলতি বা টালবাহানা হয়, তবে সারা দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে কর্মসূচি নিতে আমরা বাধ্য হব।”

দলীয় সূত্র জানায়, জুলাইজুড়ে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির মাধ্যমে এনসিপি গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবিতে সারা দেশে শোডাউন করেছে। এখন তারা ‘উঠানে নতুন সংবিধান’ নামে উঠান বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছে। পরবর্তী ধাপে বিক্ষোভ, সমাবেশসহ নতুন কর্মসূচি ও জুলাই পক্ষের অন্যান্য শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, “কোনো ব্যক্তি বা দলের সততার ওপর নির্ভর করে জুলাই সনদের সংস্কার আটকে রাখা যাবে না। এর আইনি ভিত্তি দিতে হবে। না হলে আন্দোলনের মাঠেই ফয়সালা হবে। শুধু টেবিলের ঐকমত্য নয়, রাজপথের ঐকমত্যও দেখাতে আমরা প্রস্তুত।”

তিনি আরো বলেন, *“আমরা জেলা-উপজেলায় সমাবেশ ও পদযাত্রা করেছি, উঠান বৈঠক করছি। ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। এখান থেকেই বড় আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব।”

এনসিপির শীর্ষ নেতারা মনে করেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৫ বছরের স্বৈরাচার হাসিনাকে উৎখাতের পর অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব ছিল—ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ, গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার, নতুন সংবিধান প্রণয়ন।

কিন্তু এক বছরের বেশি সময় পার হলেও সরকার এসব লক্ষ্য বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ এনসিপির।

তাদের দাবি, সরকার এখন সব দলের ঐকমত্যের নামে জুলাই ঘোষণাপত্র দিয়ে দায় সারা কাজ করছে। বিএনপিসহ কয়েকটি দল এতে খুশি হলেও এনসিপিসহ অনেকে ঘোর আপত্তি জানিয়েছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দুই দফায় ৮৪টি প্রস্তাবে সমঝোতা করলেও বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি কয়েকটি বিষয়ে ভিন্নমত দেয়। খসড়া সনদ দলগুলোর কাছে গেলেও তা ছিল ‘অপূর্ণাঙ্গ ও ধোঁয়াশাপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেছে এনসিপি। বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে সংলাপের দাবি থাকলেও কমিশন তা এড়িয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।

এর মধ্যেই বিএনপির সঙ্গে বৈঠক শেষে সরকারপ্রধান নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করায় এনসিপি আরও শঙ্কিত। তাদের মতে, সনদ বাস্তবায়নের আগেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া সংকট তৈরি করতে পারে।

সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, *“জুলাই সনদ চূড়ান্ত না করে নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ ঘোষণা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের শামিল। সংস্কারের অগ্রগতি ও বিচারের রোডম্যাপের আগে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা ভবিষ্যতে সংকট ডেকে আনবে।”

এনসিপি জানায়, এ মাসেই তারা স্বৈরাচার হাসিনাসহ জুলাই গণহত্যাকারীদের বিচারে ধীরগতি, পতিত ফ্যাসিবাদের দোসরদের রাজনীতি অব্যাহত থাকা, প্রশাসন ও আমলাতন্ত্রের ষড়যন্ত্র, এমনকি নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান—এসব ইস্যুতে সোচ্চার হবে।

আখতার হোসেন সম্প্রতি এক বক্তব্যে বলেন, “যদি টেবিল আলোচনায় সমাধান না হয়, তবে রাজপথ দখলের প্রস্তুতি নিতে হবে। নতুন সংবিধান প্রণয়ন বাধাগ্রস্ত হলে এক সেকেন্ড দেরি না করে আমরা আন্দোলনে নামব।”

সম্পর্কিত বিষয়: