আরাফায় দোয়া, ইবাদতে মশগুল হাজিরা

হজের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ ফরজ আরাফায় অবস্থান পালনের জন্য আজ বৃহস্পতিবার (৮ জিলহজ, ৫ জুন) ভোর থেকে আরাফায় পৌঁছাতে শুরু করেছেন হাজিরা। এখানে পৌঁছে আল্লাহর কাছে দোয়া ও ইবাদতে সময় অতিবাহিত করছেন তারা।
সৌদি কর্তৃপক্ষ হাজিদেরকে দিনের সবচেয়ে উত্তপ্ত সময়ে (সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা) বাইরে না থাকার অনুরোধ জানিয়েছে।
হাজার হাজার হাজি ফজরের আগেই আরাফার ময়দান, জাবালে রহমত পাহাড় ও তার আশপাশের সমতল ভূমিতে একত্রিত হতে শুরু করেন। এটি সেই ঐতিহাসিক স্থান যেখানে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তার বিদায় হজের ভাষণ প্রদান করেছিলেন।
অনেকেই গরম এড়াতে রঙিন ছাতা নিয়ে ভোরেই পৌঁছে গেছেন আরাফায়, দিনভর সেখানে কোরআন তিলাওয়াত ও দোয়ায় ব্যস্ত থাকবেন তারা। সূর্যাস্তের পর তারা আরাফাত থেকে মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা হবেন।
মিনা ও আরাফার ময়দানের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত একটি এলাকা মুজদালিফা। শয়তানকে প্রতীকি পাথর নিক্ষেপের রীতি অনুসরণের জন্য এখান থেকে তারা পাথর সংগ্রহ করবেন।
হাজিদের অশ্রুভেজা অনুভূতি
৩৩ বছর বয়সী পাকিস্তানি হাজি আলী বলেছেন, প্রতি বছর টেলিভিশনে হজের দৃশ্য দেখতাম আর ভাবতাম—আহ! আমি যদি এখানে থাকতে পারতাম।
তিনি জানান, গত তিন বছর ধরে হজে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। আরাফার পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেকে খুবই সৌভাগ্যবান মনে করছি।’
পাহাড়ের গায়ে ও পাদদেশে শত শত হাজি সাদা ইহরামে প্রার্থনায় মগ্ন আছেন, কেউ ছবি তুলছেন।
সৌদি কর্তৃপক্ষ চলতি সপ্তাহের শুরুতে হাজিদের দুপুর ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তাঁবুর ভেতরে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে। কারণ এই সময় মরুভূমির রোদ সবচেয়ে তীব্র থাকে। আবহাওয়ার তাপমাত্রা ইতোমধ্যে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে।
হাজিদের নিরাপত্তা ও নিরবচ্ছিন্ন সেবা
হজকে নিরাপদ ও আরামদায়ক করতে ৪০টিরও বেশি সরকারি সংস্থা ও ২.৫ লাখ কর্মী নিয়োজিত করা হয়েছে। ছায়াযুক্ত স্থান ৫০ হাজার বর্গমিটার (১২ একর) বৃদ্ধি করা হয়েছে, ৪০০টিরও বেশি কুলিং ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে এবং হাজার হাজার চিকিৎসাকর্মী প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
৫৪ বছর বয়সী সিরিয়ার আদেল ইসমাইল বলেন, আমি সূর্য থেকে বাঁচতে আগে চলে এসেছি। পরে আমি তাঁবুর ভেতরে নামাজ পড়ব।
হজে আগত একজন নারী ইমান আবদেল খালেক কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি গত ১০ বছর ধরে হজের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এক সময় তো আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। আজ এখানে এসে যেন স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।