পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৮ বছর আজ
আজ মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তি। ১৯৯৭ সালের এই দিনে প্রায় দুই দশকের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে স্বাক্ষরিত হয়েছিল পার্বত্য শান্তি চুক্তি। চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন শান্তিবাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র সমর্পণও করেন। কিন্তু দীর্ঘ ২৮ বছর পেরোলেও পাহাড় এখনো স্থায়ী শান্তির মুখ দেখেনি; থামেনি সহিংসতা কিংবা অস্ত্রের ঝনঝনানি।
চট্টগ্রাম হিল ট্র্যাক্টসের তিন জেলায় শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে এই চুক্তি হলেও বাস্তবায়নের পথে রয়েছে নানা বাধা। স্থানীয়দের মতে, চুক্তির যেসব মূল ধারার ওপর স্থায়ী শান্তি নির্ভর করে—সেগুলো আজও বাস্তবায়িত হয়নি। এতে পাহাড়ি-বাঙালি দূরত্ব বরং আরও বেড়েছে। চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার, দল ও উপদল বৃদ্ধি এবং প্রাণহানির ঘটনাও কমেনি। ফলে পাহাড়ে বেড়েছে অবিশ্বাস ও হতাশা।
স্থানীয়রা বলেন, চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বাস্তবায়নের অনিশ্চয়তা থেকেই ক্রমশ বেড়েছে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাত। রাজনৈতিক নেতারা ক্ষমতায় যাওয়ার আগে চুক্তি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও ক্ষমতায় গিয়ে তা ভুলে যান—এ অভিযোগও রয়েছে।
নাগরিক সমাজের দাবি, চুক্তি বাস্তবায়নে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের ঘাটতি যেমন আছে, তেমনই নেই কার্যকর কোনো রোডম্যাপ। কোন কোন ধারার কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে—এ নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। জনসংহতি সমিতির অভিযোগ, কোন সরকারই প্রকৃত সদিচ্ছা নিয়ে চুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেনি; বরং প্রতারণার শিকার হয়েছে পাহাড়ের মানুষ।
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা আরও বলেন, গণরায়টা নিয়ে যদি সরকারের সঙ্গে চুক্তি হতো, তাহলে এটা আরও সুদৃঢ় হতো। ভূমী অধিকার বা নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা করতে জেলা পরিষদ থেকে যে বাধা দেয়া হয়েছে সেগুলো দুর হোক। চুক্তি যে সরকারের সময় হয়েছে পরবর্তী সরকারগুলোও এর ধারাবাহিকতা রাখা উচিৎ ছিলো।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার বলেন,“পাঁচটি রাজনৈতিক সরকার এবং দুটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলেও কোনো সরকারই রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিয়ে চুক্তি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়নি।”
জেএসএস (এমএন লারমা)-র সাংগঠনিক সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা বলেন, “এতো বছর পরও সরকারের কাছ থেকে আমরা সুস্পষ্ট রোডম্যাপ পাইনি—কবে কীভাবে চুক্তি বাস্তবায়িত হবে।”
চুক্তিতে মোট ৭২টি ধারা থাকলেও ভূমি বিরোধসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে। ফলে দুই দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও পাহাড়ে স্থায়ী শান্তির স্বপ্ন এখনো পূরণ হয়নি।



























