ড্রাইভারদের আলাদা ডাটাবেজ করছে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন

দেশে প্রথমবারের মতো নারায়ণগঞ্জ জেলার সব বাস ও ট্রাক ড্রাইভারদের নিয়োগপত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া দ্রুতই শুরু হচ্ছে। এ ছাড়া দুর্ঘটনার পরে দায়ী চালকদের দ্রুত শনাক্ত করতে ড্রাইভারদের জন্য আলাদা ডাটাবেজ তৈরি হচ্ছে। দ্রুতই জেলার সব বাসের ড্রাইভার ও হেল্পারদের জন্য আলাদা আলাদা পোশাকও দেওয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সম্মলেন কক্ষে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস ও সড়কে শৃঙ্খলা আনতে এক মতবনিমিয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম তার এক গুচ্ছ পরিকল্পনার কথা জানান।
তিনি বলেন, সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জেলার পরিবহন ব্যবস্থারও পরিবর্তন আনতে হবে। যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা নিরাপদ করতে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক।
নারায়ণগঞ্জ জেলা দেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা এবং আন্তঃজেলা পরিবহনের গুরুত্বর্পূণ কেন্দ্র। প্রতিদিন লাখ লাখ যাত্রী এই জেলার ওপর দিয়ে যাতায়াত করেন। গত ঈদুল আজহার সময়ে অতীতের চেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং প্রাণহানিও বেশি হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটেই সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরাতে আজকের এই সভার আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন।
ফিটনেসবিহীন গাড়ি এবং অবৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্সই সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারন উল্লেখ করে জাহিদুল ইসলাম বলেন, বেশিরভাগ দুর্ঘটনার পরে অপরাধী শনাক্তে চালকদের পর্যাপ্ত তথ্য না থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেকায়দায় পড়তে হয়। এই জন্য জেলার সব ড্রাইভারদের তথ্যভত্তিকি ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, গণ পরিবহনের ড্রাইভার নিয়োগের সময় ড্রাইভিং লাইসেন্স, ড্রাইভারের শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা এবং মাদকাসক্তি পরীক্ষাও দরকার। তিনি মালিকদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, আপনার মহা মূল্যবান গাড়িটির নিরাপত্তার জন্য হলেও নিয়োগপত্র দরকার। এ ছাড়া একজন ড্রাইভারের সামাজিক মর্যাদাও বাড়বে নিয়োগপত্র থাকলে।
একজন ড্রাইভার জানেন না তার চালানো গাড়িটি আগামীকাল তিনিই চালানোর সুযোগ পাবেন কি না। অথচ গাড়িটি চালাতে চালাতে সেই গাড়ির প্রতি এক ধরনের মায়াও সৃষ্টি হয় চালকের। এ জন্য ড্রাইভারদের বাধ্যতামূলক নিয়োগপত্র দেওয়া বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করছি আমি, তিনি আরও যোগ করেন।
অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার কারণে চালকদের ক্লান্তিও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, চালকদের নির্ধারিত কর্মঘণ্টা ও পর্যাপ্ত বিশ্রামের ব্যবস্থা দরকার।
চালকরে অনুপস্থিতির সুযোগে হেল্পারদের দিয়ে গাড়ি চালানো বন্ধে আইন প্রয়োগ, চালক ও হেল্পারদের জন্য পৃথক পোশাক ও পরিচয়পত্র চালুর প্রস্তাব দেন তিনি।
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন জেলার সব চালকদরে নামমাত্র খরচে নিয়মিত ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। সচতেনতামূলক কর্মসূচি নেয়াও জরুরি বলে তিনি মনে করেন।
নারায়ণগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. রওশন আলী সরকার নারায়গঞ্জ জেলায় এ ধরনের উদ্যোগ প্রথম নেওয়ায় জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানান।
নারায়ণগঞ্জ পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. সেলিম বলেন, জেলা প্রশাসকের উদ্যোগগুলো সফল হলে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
সভায় জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়, সিভিল সার্জন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধি ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।