ফরিদা পারভীনের চলে যাওয়া বিশ্বাস করতে পারছি না : সাবিনা ইয়াসমিন

ফরিদা পারভীন নেই—এই কথাটা এখনো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। তাঁর চলে যাওয়ার বয়স তো এখনো হয়নি। সংগীতজগতে এমন একজন শিল্পীর অভাব আমাদের দীর্ঘদিন বয়ে বেড়াতে হবে।
এমন শিল্পী যুগে যুগে আসেন না। তিনি লালনসংগীতকে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন। বিশেষ করে জাপানে লালনগীতিকে তিনি আলাদা মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করেছেন। অথচ আমরা কি দেশে তাঁকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে পেরেছি?
ফরিদা পারভীন লালনের আদি সুরগুলো সংগ্রহ করে সহজভাবে উপস্থাপন করেছেন এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন লালনের ভাবত্ত্ব। এজন্যই তিনি ‘লালনকন্যা’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন, যা নিঃসন্দেহে তাঁর প্রাপ্য সম্মান।
এই সময়ে তাঁর চলে যাওয়া সংগীতের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। আমার সঙ্গে ফরিদা পারভীনের খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। যখন তাঁর ফার্মগেটে বাসা ছিল, আমি নিজেই কয়েকবার গিয়েছি। তাঁর কাছে লালনসংগীত শিখেছি, লালন সম্পর্কে জেনেছি। দেশে-বিদেশে একসঙ্গে গান করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে।
আমাদের নিয়মিত দেখা না হলেও ফোনে যোগাযোগ হতো। গতকালও (শনিবার) তাঁর জন্য আল্লাহর কাছে অনেক দোয়া করেছি। বলেছি, আল্লাহ, ফরিদা পারভীনকে এই যাত্রায় আবার আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দাও। হয়তো তাঁর যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছিল বলেই আর ফিরলেন না।
তবে ফরিদাকে যদি কেউ কেবল লালনকন্যা হিসেবেই দেখেন, তাহলে ভুল হবে। তাঁর কণ্ঠে দেশাত্মবোধক গান, আধুনিক গান, নজরুলগীতিও ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। ‘তোমরা ভুলে গেছো মল্লিকাদির নাম’ কিংবা ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’—এসব গান তাঁর কণ্ঠে এক অনন্য ব্যঞ্জনা পেয়েছে।
ফরিদা পারভীন সত্যিই ছিলেন বিরল প্রতিভার অধিকারী, যাঁর শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়।