মেলিসার তাণ্ডবে লন্ডভন্ড ক্যারিবীয় অঞ্চল, নিহত অন্তত ২৫
প্রবল শক্তিশালী হারিকেন ‘মেলিসা’ ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জজুড়ে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। ঝড়ে বহু ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে, প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা, আর প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৫ জন।
জ্যামাইকা, হাইতি ও কিউবায় ঘরবাড়ি, হাসপাতাল ও সড়ক ধ্বংস হয়ে পড়েছে। বহু অঞ্চল এখনো বিদ্যুৎ ও যোগাযোগবিহীন অবস্থায় রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়ের সবচেয়ে ভয়াবহ আঘাত হানে জ্যামাইকায়। ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটারেরও বেশি বেগে বয়ে যাওয়া ক্যাটাগরি–৫ মাত্রার এই ঝড়ে দেশটিতে অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
জ্যামাইকার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস বলেন, “পুরো দেশটাই যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বাড়ির ছাদ উড়ে গেছে। হাসপাতাল, লাইব্রেরি, পুলিশ স্টেশন ও বন্দরঘরসহ সরকারি স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
এদিকে হাইতিতে ভয়াবহ বন্যায় আরও ২০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১০ জন শিশু। যদিও মেলিসা বর্তমানে দুর্বল হয়ে ক্যাটাগরি–১ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে, তা এখনও তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে।
ঝড়ের প্রভাবে জ্যামাইকার বিভিন্ন এলাকায় হাজারো মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। দেশটির স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ডেসমন্ড ম্যাকেঞ্জি জানান, তিনজন পুরুষ ও এক নারী বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে মারা গেছেন।
দেশটির প্রায় তিন-চতুর্থাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন। মন্টেগো বে শহরের মেয়র রিচার্ড ভারনন বলেন, “শহরের অর্ধেকটাই পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন আমাদের একটাই লক্ষ্য— সবাই বেঁচে আছেন কি না তা নিশ্চিত করা।”
কিংস্টনের ব্যবসায়ী গর্ডন সোয়াবি জানান, তার কাজিনের পুরো বাড়ি ধসে গেছে। “সে সমুদ্রের ধারে নিজের স্বপ্নের বাড়ি বানিয়েছিল। এখন কিছুই নেই,” বলেন তিনি।
বিদেশি পর্যটক পিয়া শেভালিয়ে বলেন, “রাতভর জানালাগুলো কাঁপছিল, ভয় আর দুশ্চিন্তায় ঘুমোতে পারিনি।”
জ্যামাইকার পর মেলিসা উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে কিউবার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানে। ঘণ্টায় প্রায় ১৮০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাওয়া ঝড়ে সেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগেল দিয়াস–কানেল জানান, দেশটি আগে থেকেই ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি’র জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল, যা ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা কমিয়েছে।
অন্যদিকে, হাইতিতে প্রবল বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যায় অন্তত ৩ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। মানবিক সংগঠন ওয়ার্ল্ড রিলিফ–এর কর্মকর্তা পাসকাল বিমেনিইয়ামানা বলেন, “উপকূলের অনেক ঘরবাড়ি ভেসে গেছে, মানুষ খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ সরাচ্ছেন।”
ঝড়ের পরিপ্রেক্ষিতে জ্যামাইকায় সহায়তা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। হাইতি ও বাহামাসও আন্তর্জাতিক সাহায্য চেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, একটি দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া দল জ্যামাইকার ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন করবে।
স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যার পর ঝড়টি বাহামাসের দিকে অগ্রসর হয়। সেখানে বিপজ্জনক জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরবর্তী ধাপে এটি বারমুডা হয়ে শুক্রবার রাতে কানাডার সেন্ট জনস শহরের কাছে গিয়ে প্রবল এক্সট্রা-ট্রপিকাল সাইক্লোনে পরিণত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি



























