নির্দেশনা না মেনে সফরসঙ্গী উপদেষ্টার স্ত্রী ও দুই বোন

অন্যান্য বছরের মতো এবারও হাজিদের সেবা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পাঁচটি টিম সৌদি আরবে গেছে। এসব টিমের অধীনে ২৯৩ জন অবস্থান করছেন দেশটিতে। এবারের হজ টিমে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মালি, গাড়িচালক, গানম্যান, অফিস সহায়ক বা পিয়ন, সচিবদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, কম্পিউটার অপারেটর, সাঁট মুদ্রাক্ষরিক, কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মচারীরা যুক্ত হয়েছেন। মন্ত্রণালয় বলছে, হাজিদের সেবা দেওয়ার জন্য নীতিমালা মেনেই এসব কর্মচারীকে টিম মেম্বার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে জারি করা বিদেশ ভ্রমণসংক্রান্ত নির্দেশনা না মেনে ধর্ম উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হয়েছেন তার স্ত্রী ও দুই বোন। এক অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে গেছেন তার স্ত্রী।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেসব কারণে মন্ত্রণালয়ের খরচে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হজ টিমের সদস্য করা হয়, সৌদি সরকার সে সেবাগুলো দিয়ে থাকে। এজন্য সরকার আলাদা চার্জও নেয়।
এ অবস্থায় নতুন করে অপ্রয়োজনীয় লোক নেয়া অন্যায় চর্চা বলে মনে করেন তারা। তাদের মতে, হাজিদের সেবার মান ও হজ মন্ত্রণালয়ের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে এ ধরনের টিম শুধু আর্থিক বোঝাই বড় করে, সেবার মানে গুণগত কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি। এখনো হজ ব্যবস্থাপনার সিংহভাগই বেসরকারি তদারকির ওপর নির্ভরশীল। তাছাড়া ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ টিমে যুক্ত হওয়ার জন্য সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তদবিরের বিষয় নিয়েও দীর্ঘদিনের অভিযোগের কথা জানিয়েছেন তারা।
এ বছর বাংলাদেশ থেকে ৮৭ হাজার ১০০ জন হজে গেছেন। তাদের মধ্যে সরকারিভাবে গেছেন ৫ হাজার ২০০ জন। সরকারিভাবে যারা হজে যান তাদের সেবার মান বরবারই সন্তোষজনক নয়। আবার যারা বেসরকারিভাবে হজে যান, তাদের সেবার দেখভাল সংশ্লিষ্ট এজেন্সিই করে থাকে। এ প্রসঙ্গে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) দুজন সাবেক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ দুজন জানান, নতুন সরকারের নতুন ধর্ম উপদেষ্টার কাছে আমাদের প্রত্যাশা ছিল ভালো কিছু হবে। কিন্তু তিনি পুরনো আমলের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনারই চর্চা করে যাচ্ছেন। সরকারিভাবে হজে যাওয়ার ক্ষেত্রে হজযাত্রীরা বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হন। এজেন্সিগুলো যেভাবে হাজিদের যত্ন নেয়, ধর্ম মন্ত্রণালয় সেটা করে না। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের টিমে যারা থাকেন তারা বড় কর্মকর্তা নয়তো কর্মচারী। হাজিদের সেবা দেয়ার বিষয়ে তাদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই, আন্তরিকতাও থাকে না। তারা সৌদি যাওয়া-আসাকে কেবল অফিস রুটিন হিসেবে নিয়ে থাকেন।
হাবের ওই দুই নেতা জানান, সরকারিভাবে যারা হজে যান তাদের যে গাইড থাকেন তার সঙ্গে দেখা হয় বিমানে ওঠার পর। ওই গাইড এমনও হন যে জীবনে প্রথম হজ করতে যাচ্ছেন। এছাড়া যারা সরকারি অর্থে হজে যান তাদের খাওয়া-দাওয়ার নিদারুণ কষ্ট হয়। এজেন্সির মাধ্যমে যারা হজে যান তাদের রান্নাসহ দেখভাল এজেন্সির পক্ষ থেকেই করা হয়।
হাবের ওই দুই নেতাসহ হজ এজেন্সির কয়েকজন মালিক জানান, ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে অপ্রয়োজনীয় লোকজনকে হজের বিভিন্ন কমিটিতে যুক্ত করাটা পুরোটাই সরকারি অর্থের অপচয়। এভাবে হজ কমিটির নামে মন্ত্রণালয়ের কর্মীদের ভ্রমণবিলাস বন্ধ হওয়া উচিত। এসব বিষয় নিয়ে এজেন্সির মালিকরা কথা বলতে গেলে মন্ত্রণালয় থেকে ওই এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়ে থামিয়ে দেয়া হয়।