বুধবার ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২০ কার্তিক ১৪৩২

সংবাদ পরিক্রমা ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:৪২, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মেট্রোরেলে বাড়ছে ১০ ট্রেন, চলবে রাত ১০টার পরও

মেট্রোরেলে বাড়ছে ১০ ট্রেন, চলবে রাত ১০টার পরও
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীবাসীর কাছে দ্রুতগতির ও আধুনিক পরিবহন হিসেবে জায়গা করে নেওয়া মেট্রোরেলে এবার যুক্ত হচ্ছে আরও ১০টি ট্রেন। প্রতিদিনই যাত্রীদের চাপ বাড়ছে, সেই চাহিদা সামাল দিতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। পাশাপাশি যাত্রীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে ট্রেন চলাচলের সময়সীমাও বাড়ানো হচ্ছে। নতুন সময়সূচি অনুযায়ী, ট্রেন চলবে রাত ১০টার পর পর্যন্ত।

প্রতিদিন সাড়ে তিন থেকে চার লাখ মানুষ মেট্রোরেল ব্যবহার করেন। বিশেষ উপলক্ষে এই সংখ্যা কখনো কখনো সাড়ে চার লাখ ছাড়িয়ে যায়। যদিও প্রকল্পের শুরুতে দিনে পাঁচ লাখ যাত্রী পরিবহনের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল, বাস্তবে সেটি এখনও পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। তবে দিনে দিনে যাত্রীসংখ্যা বাড়ার ফলে কোচ সংকট স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

বর্তমানে মেট্রোরেল দিনে প্রায় ২০০টি ট্রিপ দিচ্ছে উত্তরা-মতিঝিল-উত্তরা রুটে। তবে ট্রেনের প্রতিটি সেটে এখন ৬টি কোচ থাকায় নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হচ্ছে না। ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে ট্রেনগুলোর জন্য ৮ কোচের সক্ষমতা রাখা হলেও এখনই অতিরিক্ত কোচ যুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।

ডিএমটিসিএলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কোচ বাড়ানো সম্ভব না হওয়ার পেছনে রয়েছে তিনটি বড় কারণ। প্রথমত, স্টেশনগুলোর প্ল্যাটফর্মে এখনও প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোর (পিএসডি) বসানো হয়নি, ফলে অতিরিক্ত কোচের জায়গা থাকলেও তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, এ ধরনের কাজের জন্য বাড়তি অর্থ প্রয়োজন, যা এই মুহূর্তে বরাদ্দ দেওয়া কঠিন। তৃতীয়ত, বিদ্যমান বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা অতিরিক্ত লোড নিতে পারবে কিনা—তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।

ফলে আপাতত কোচ বাড়ানোর পরিবর্তে ট্রিপ বাড়ানোর দিকেই অগ্রসর হচ্ছে ডিএমটিসিএল। নতুন পরিকল্পনায় আরও ১০টি ট্রিপ যুক্ত করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এতে করে প্রতিদিন অতিরিক্ত ২৩ হাজার যাত্রী মেট্রোরেলে চলাচল করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

এই নতুন ট্রিপের আওতায় যাত্রীরা সকাল ৬টা ৩০ মিনিট থেকেই ট্রেনে চড়তে পারবেন। আগে যেখানে ট্রেন চলতো সকাল ৭টা ১০ মিনিট থেকে, এখন তার আগেই শুরু হবে চলাচল। দিনের শেষ ট্রেন ছাড়বে রাত ১০টা ১০ মিনিটে, যেখানে আগে তা ছিল রাত ৯টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, সকাল ৬টা ও সাড়ে ৬টায় প্রতিদিন দুটি সুইপিং ট্রেন চালানো হয় লাইনের নিরাপত্তা পরীক্ষা করতে। এখন সেই দ্বিতীয় সুইপিং ট্রেনেই যাত্রী তোলা হবে, তবে শুরুতে শুধু এমআরটি পাস ও র‌্যাপিড পাসধারীরা তাতে উঠতে পারবেন। একইভাবে রাতে বাড়তি কয়েকটি ট্রেন চলবে, যার মধ্যে রাত ১০টার পরও মতিঝিল থেকে ট্রেন ছাড়বে।

তবে এ নিয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের মধ্যে রয়েছে ভিন্নমত। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান মনে করেন, ট্রিপ বাড়ানোর চেয়ে কোচ বাড়ানো এখন বেশি জরুরি। তার মতে, মেট্রোরেল একটি বিদ্যুৎ-নির্ভর পরিবহন ব্যবস্থা, যেখানে এক মিনিট হেডওয়ে কমিয়ে দিলেও বিদ্যুৎ খরচ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। ফলে অতিরিক্ত ট্রিপ চালানো ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে। তিনি আরও বলেন, যেহেতু শুরু থেকেই ৮ কোচের ধারণা নিয়ে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিল, তাই বর্তমান যে সমস্যাগুলোর কথা বলা হচ্ছে তা আগেই সমাধান করা উচিত ছিল।

ডিএমটিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) মোহাম্মদ ইফতিখার হোসেন জানিয়েছেন, বিষয়টি এখনো পর্যবেক্ষণ ও যাচাইয়ের পর্যায়ে রয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসার আগ পর্যন্ত সময় লাগবে।

সম্পর্কিত বিষয়:

জনপ্রিয়