শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে জখমের ঘটনায় দুই মাদ্রাসা শিক্ষক বরখাস্ত

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে প্রফেসর কাজি ফারুকি কল্যাণ ট্রাস্টের পরিচালিত কাজি হাছানুজ্জামান ও অজিউল্লাহ হাফিজিয়া মাদ্রাসায় এক শিশু ছাত্রকে পিটিয়ে জখমের ঘটনায় অভিযুক্ত দুই শিক্ষক আতাউর ও শরীফ হোসেনকে বরখাস্ত করেছেন কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আহত শিক্ষার্থী মাহমুদ হাসানকে রায়পুর সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনা ঘটে বুধবার রাতে মাদ্রাসা ভবনের হেফজ বিভাগের ছাত্রদের সামনে।
আহত ছাত্রের মামা ফিরোজ আলম জানান, ওই প্রতিষ্ঠানের হেফজ বিভাগের ছাত্র মাহমুদুর রহমান কোন পড়া না পাড়ার কারণে শিক্ষক শরীফ হোসেন ৬টি বেত্রাঘাত করে। বৃহস্পতিবার আবার একই কারণ দেখিয়ে হেফজ বিভাগের প্রধান আতাউর রহমান ১২টি বেত্রাঘাত করে। এ সময় মাহমুদ অচেতন হয়ে মাটিতে লুটে পড়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তার মা শাহিনুর বেগমকে মাদ্রাসায় ডেকে এনে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ।
আহত মাহমুদুর রহমান রায়পুরের উত্তর চরবংশী ইউপির খাসেরহাট এলাকার সৌদি প্রবাসী মিজানুর রাহমান ও গৃহিণী মা শাহিনুর বেগম ছেলে। আহত মাহমুদুর রহমানকে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রায়পুর সরকারি হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।
ছাত্র মাহমুদুর রহমানকে আহতের ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকালে অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে (সিলেটের জামালগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা) বহিষ্কার করা হয়। ঘটনার পর সাংবাদিক ও পুলিশ মাদরাসায় যাওয়ার আগেই পালিয়ে যান অভিযুক্ত দুই শিক্ষক।
আহত শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান জানায়, বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) কুরআন ভুল পড়ার কারণে শিক্ষক শরীফ হোসেন ৬টি বেত্রাঘাত করে। একই কারণে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) শিক্ষক আতাউর রহমান ১২টি বেত্রাঘাত করেন। মারধরের পর দুই শিক্ষক হুমকি দিয়েছেন, ঘটনাটি মাকে জানালে জবাই করে ফেলা হবে অথবা মাদ্রাসার ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হবে।
শিক্ষার্থী মাহমুদের মা শাহিনুর বেগম জানান, আমি বাড়িতে কাজ করছিলাম। বড় হুজুর ফোন করে জানান আপনার ছেলে অসুস্থ, তাকে বাড়িতে নিয়ে যান। ছেলে বলেছে, কুরআন পড়া না পারায় দুই শিক্ষক পৃথকভাবে নির্মমভাবে মারধর করেছে। জামা খুলে দেখি পুরো শরীরে একাধিক আঘাতের দাগ। আমার সন্তান অন্যায় করলে আমাদের বলতে পারতেন, এভাবে মারধর করা মানবিক নয়। এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। এর আগেও এই শিক্ষকরা এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেছিলেন।
এ বিষয়ে শিক্ষক শরীফ হোসেন ও আতাউর রহমান পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মাদ্রাসার মুহতামিম (প্রধান) ও প্রিন্সিপাল কাজি ফারুকি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক ফারুখ হোসেন বলেন, শিশু ছাত্র মাহমুদুর রহমানের (৯) ওপর অন্যায়ের শাস্তি হিসেবে দুই শিক্ষকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আমরা হাসপাতালে গিয়ে মাহমুদের খোঁজখবর নিয়েছি।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. পিযুস চন্দ্র দাস জানান, আহত শিশু শিক্ষার্থী মারাত্মকভাবে জখম হয়েছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার পর সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হয়েছে।