জামায়াতের বক্তব্য ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করল জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম কুষ্টিয়া-৩ আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী মুফতি আমির হামজার সাম্প্রতিক বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে ফয়জুল হাকিম এই বক্তব্যকে ইতিহাস বিকৃতি আখ্যা দিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মুফতি আমির হামজা দাবি করেছেন যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের ১৯৭১ সালের ভূমিকা নিয়ে এতদিন মিথ্যা ইতিহাস প্রচার করা হয়েছে এবং বদরুদ্দীন উমরের লেখা বইয়ে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত অধিকাংশ বর্ণনা মিথ্যা। এই বক্তব্যের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীর চেষ্টা হচ্ছে এমন একটি ধারণা প্রতিষ্ঠা করা যে, তারা ১৯৭১ সালে যুদ্ধের বিরুদ্ধে নয়, বরং ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল।
ফয়জুল হাকিম বলেন, ১৯৭১ সালে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বাধীন সামরিক শাসনের অধীনে জামায়াতে ইসলামীর মালেক মন্ত্রিসভার সদস্য থাকা সত্ত্বেও দলটির ভূমিকা ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে বাঙালি জনগণের উপর নিধন ও গণহত্যায় অংশ নেওয়া এবং সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে সশস্ত্র ভূমিকা পালন করা।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দেশীয় সহযোগী রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশের জনগণ, ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের বিদ্রোহী সেনা অফিসার ও সৈনিকরা, এবং আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন কমিউনিস্ট ও বিপ্লবী রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীর সদস্যরা সশস্ত্রভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিল।
ফয়জুল হাকিম বলেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। একই সঙ্গে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠিত মিথ্যা বয়ানও ভেঙে পড়ছে। এই সুযোগে জামায়াতে ইসলামী নতুন প্রজন্মের কাছে নিজেদের অতীত গণবিরোধী ও প্রতিক্রিয়াশীল ভূমিকা, বিশেষ করে ১৯৭১ সালের গণহত্যায় সহযোগী ভূমিকা আড়াল করতে সক্রিয় হয়েছে।
তিনি বলেন, কমিউনিস্ট, বিপ্লবী এবং ইতিহাসবিদ বদরুদ্দীন উমর ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের ভূমিকা, তৎকালীন গোপন বিপ্লবী ও সংসদীয় কমিউনিস্ট দলগুলোর কার্যক্রম এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির অবস্থান বিশ্লেষণ করেছেন। পাশাপাশি তিনি সাম্প্রতিক সময়ে শেখ হাসিনা সরকারের উদ্যোগে রচিত ইতিহাসেরও কঠোর সমালোচনা করেছেন এবং বলেছেন, এর নব্বই ভাগই মিথ্যা।
ফয়জুল হাকিম অভিযোগ করেন, বদরুদ্দীন উমরের এই বক্তব্যকে খণ্ডিতভাবে উদ্ধৃত করে মুফতি আমির হামজা রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছেন, যা জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে।
তার ভাষায়, জনগণকে ইতিহাস ভুলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে জামায়াতে ইসলামী মূলত নিজেদের অতীত গণবিরোধী ভূমিকা আড়াল করতে চাইছে, যা একটি অসৎ ও মিথ্যাবাদী রাজনৈতিক প্রবণতার বহিঃপ্রকাশ।



























