শনিবার ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ৩ কার্তিক ১৪৩২

সংবাদ পরিক্রমা ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:১৮, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

আইয়ুব বাচ্চুকে হারানোর ৭ বছর

আইয়ুব বাচ্চুকে হারানোর ৭ বছর
ছবি: সংগৃহীত

আজ ১৮ অক্টোবর—বাংলা ব্যান্ড সংগীতের কিংবদন্তি আইয়ুব বাচ্চুর সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী। দেখতে দেখতে তার না থাকার সাতটি বছর পেরিয়ে গেল। তবু মনে হয়, তিনি যেন এখানেই আছেন—গিটারের প্রতিটি তারে, প্রতিটি গানে, প্রতিটি ভালোবাসায়।

বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের ইতিহাসে আইয়ুব বাচ্চু শুধু একজন গায়ক বা গিটারিস্ট নন, ছিলেন এক যুগের প্রতীক। তিনিই প্রথম বাংলা ব্যান্ড সংগীতে নিয়ে এসেছিলেন আধুনিক ধারা, সৃষ্টি করেছিলেন নিজস্ব এক ‘ব্র্যান্ড’ সংগীতের। হৃদয়ছোঁয়া কথার সঙ্গে শ্রুতিমধুর সুর, নিখুঁত সংগীতায়োজন আর তার ভরাট কণ্ঠ—এই ত্রিমাত্রিক জাদুতেই মুগ্ধ করেছেন লাখো শ্রোতা। এখনো তার গান গেয়ে ওঠে মানুষ, এখনো ‘চলো বদলে যাই’ উচ্চারণেই বুক কেঁপে ওঠে সংগীতপ্রেমীদের।

চট্টগ্রামের এই কৃতী সন্তান জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট। ছোটবেলা থেকেই সংগীতের প্রতি ভালোবাসা তাকে নিয়ে আসে গানের জগতে। ১৯৭৭ সালে শুরু হয় তার সংগীতযাত্রা, আর এক বছর পর প্রবেশ করেন ব্যান্ড সংগীতে।

১৯৮০ সালে তিনি যোগ দেন খ্যাতনামা ব্যান্ড **সোলস**-এ এবং টানা এক দশক ছিলেন দলের সঙ্গে। এরপর ১৯৯১ সালে গড়ে তোলেন নিজের ব্যান্ড **লাভ রানস ব্লাইন্ড (এলআরবি)**—যা পরিণত হয় বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের এক ইতিহাসে। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি ছিলেন এই ব্যান্ডের প্রধান কণ্ঠশিল্পী ও প্রাণপুরুষ।

তার প্রথম গাওয়া গান ছিল ‘হারানো বিকেলের গল্প’। একক অ্যালবামের শুরু হয় ‘রক্তগোলাপ’ দিয়ে, তবে প্রকৃত সাফল্য আসে দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘ময়না’ থেকে। চার দশকের সংগীত জীবনে আইয়ুব বাচ্চু উপহার দিয়েছেন অসংখ্য কালজয়ী গান—যেমন ‘ফেরারি মন’, ‘হাসতে দেখো’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘চলো বদলে যাই’, ‘সুখেরই পৃথিবী’—যেগুলো আজও প্রজন্মের পর প্রজন্ম গেয়ে যাচ্ছে আবেগে ভেসে।

তার কণ্ঠে ছিল এক অনন্য আবেগ—যেখানে মিশে থাকত সুখ, দুঃখ, ভালোবাসা, কষ্ট আর জীবনের গভীর দর্শন। তিনি গাইতেন হৃদয় দিয়ে, আর শ্রোতারা শুনতেন চোখের জলে।

২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে চলে যান এই সংগীত কিংবদন্তি। তবু দরজার ওপাশে চলে গেলেও, দরজার এপাশে রেখে গেছেন কোটি ভক্তের ভালোবাসা আর অশ্রুসিক্ত স্মৃতি।

আইয়ুব বাচ্চু নেই—কিন্তু তার গান, তার গিটার, তার হাসিমুখ আজও বেঁচে আছে প্রতিটি সংগীতপ্রেমীর হৃদয়ে।

জনপ্রিয়