আরও এক মাসের ছুটিতে বিচারপতি আশরাফুল কামাল ও বদরুজ্জামান

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ হাইকোর্ট বিভাগের দুই বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও মো. বদরুজ্জামানের ছুটি আরও এক মাস বাড়িয়েছেন। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি ছুটি মঞ্জুর করেন।
বুধবার (১৮ জুন) সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কর্মকর্তা ও মুখপাত্র মোয়াজ্জেম হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া হাইকোর্টের এই দুই বিচারপতির বিরুদ্ধে পৃথক অভিযোগ রয়েছে।
প্রধান বিচারপতি চলতি অবকাশের পর আগামী ২২ জুন হতে বিচারকাজ পরিচালনার জন্য ৪৯টি হাইকোর্ট বেঞ্চ পুনর্গঠন করে দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতির এ সংক্রান্ত নির্দেশনা গতকাল মঙ্গলবার জারি করা হয়। তবে ২২ জুন হতে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুনর্গঠনকৃত বেঞ্চে এই দুই বিচারপতি নাম নেই। অর্থাৎ এই দুই বিচারপতিকে বিচারিক কার্যক্রম থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিচারপতি আশরাফুল কামাল প্রথমে গত ২০ এপ্রিল পর্যন্ত বই লেখার জন্য ছুটি নেন। পরে ৩ জুন তিনি লেখালেখির কাজ শেষ করতে ছুটি বাড়ানোর আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়। বিচারপতি বদরুজ্জামানও ২০ এপ্রিল চিকিৎসাজনিত ছুটির আবেদন করেন। পরে আবার বাড়ানো হয়।
এ পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সুপারিশে হাইকোর্ট বিভাগের সাতজন বিচারপতি অপসারণ অথবা নিজেরা পদত্যাগ করেছেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। পরে আপিল বিভাগের রায়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল হয়।
২০২৪ সালের ৬ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রায় দেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত বিচারপতিদের অপসারণ অথবা অভিযুক্ত বিচারপতিরা নিজেরাই যেন স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন এমন দাবি জানায়।
২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিচার বিভাগে পক্ষপাতের অভিযোগে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি হাইকোর্ট বিভাগের ১২ জন বিচারপতিকে তাদের বিচারিক দায়িত্ব পালন থেকে সরিয়ে দেয়।
বিচারপতি আশরাফুল কামাল প্রথমে ২০ এপ্রিল বই লেখার জন্য ছুটি নেন। পরে ৩ জুন তিনি লেখালেখির কাজ শেষ করতে ছুটি বাড়ানোর অনুরোধ করেন, যা ১৭ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়। বিচারপতি বদরুজ্জামানও ২০ এপ্রিল চিকিৎসাজনিত ছুটির আবেদন করেন, যা পরে বাড়ানো হয়।
সম্প্রতি ১৬তম সংশোধনী মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে আপিল বিভাগের দুই বিচারপতি রেজাউল হক এবং এসএম এমদাদুল হক, বিচারপতি আশরাফুল কামালের বিরুদ্ধে বিচারিক অনাচারের অভিযোগ তোলেন।
রায়ে তারা বলেন, তিনি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সম্পর্কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অবমাননাকর ও অশোভন মন্তব্য করেছেন। যা অশ্লীল এবং বিচারিক আচরণের পরিপন্থী।
বিচারপতি আশরাফুল কামালের ওই মন্তব্য সংবিধান ও বিচারিক নীতিমালার পরিপন্থী হওয়ায় রায় থেকে তা বাদ দেয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতিরা।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের লেখা এবং অন্য পাঁচ বিচারপতি সমর্থিত এই রায়টি সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়।
২০২৪ সালের ২০ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ সরকার কর্তৃক দায়েরকৃত রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন এবং বিচারপতি জিয়াউর রহমান কর্তৃক ১৯৭৯ সালে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রবর্তিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহালের রায় বহাল রাখেন।
বিচারপতি আশরাফুল কামাল ২০১৬ সালে ১৬তম সংশোধনী মামলায় হাইকোর্টে রায় দেয়া তিনজন বিচারপতির একজন ছিলেন। নিজস্ব মতামতে বিচারপতি আশরাফুল কামাল জিয়াউর রহমানকে "রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারী" হিসেবে উল্লেখ করেন।
বিচারপতি বদরুজ্জামান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়িত্ব পালন করা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জান্নাতুল ফেরদৌসী রুপার স্বামী। একটি দুর্নীতি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ মার্চ ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত রুপার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
রুপা বিভিন্ন মামলায় আসামিদের জামিনের ব্যবস্থা করে দেয়ার বিনিময়ে মোটা অঙ্কের অর্থ গ্রহণ করে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) করা অভিযোগের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বলে জানা গেছে।