স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় জার্মানি
জার্মানির রাষ্ট্রদূত ড. রুডিগার লোৎজ বলেছেন, জার্মানি প্রত্যাশাই করে যে বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলকভাবে অনুষ্ঠিত হবে।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন (ডিক্যাব) আয়োজিত ‘ডিক্যাব টক’-এ রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভোটারদের ভোট দিতে কোনো বাধার সম্মুখীন করা যাবে না এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে শান্তিপূর্ণ, ভীতিহীন পরিবেশে অবাধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দিতে হবে।
তিনি বলেন, ‘যখন আমরা স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলি, তখন আমরা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ভোটারদেরকে অবাধে অংশগ্রহণের সুযোগ এবং একাধিক রাজনৈতিক দলের অবাধ প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিশ্চিত করা বোঝাই।’
ইইউ ও জার্মানির দৃষ্টিতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলতে কী বোঝানো হয়- রাষ্ট্রদূত তার ব্যাখ্যাও তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে শান্তিপূর্ণ ও অহিংস নির্বাচনী পরিবেশ, শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক মতপ্রকাশের সুযোগ এবং এমন একটি প্রক্রিয়া প্রয়োজন যেখানে ভোট সঠিকভাবে ও স্বচ্ছভাবে গণনা করা হয়।
রাষ্ট্রদূত বলেন, উচ্চ ভোটার উপস্থিতি জনগণের আস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হবে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের একটি মন্তব্য স্মরণ করে তিনি বলেন, প্রায় ৬০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি ‘যথার্থ ও ইতিবাচক মানদণ্ড’ হতে পারে।
তিনি জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি বড় নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর সম্ভাবনা রয়েছে, যা বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্ব এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রত্যাশাকে প্রতিফলিত করে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার প্রাথমিক আলাপচারিতা থেকে এই দেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ গভীরভাবে প্রোথিত তা উপলব্ধি করতে পেরেছেন উল্লেখঝ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা আমাদের সহায়তা পাবেন।’
তিনি বলেন, ‘মানুষ নিজের মতামত প্রকাশে উন্মুক্ত। এটিই গণতান্ত্রিক শিকড়ের শক্তি।’
দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে কথা বলতে গিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় পুনর্মিলন প্রক্রিয়া জরুরি।
তিনি উল্লেখ করেন, বহু বছর ধরে দেশের রাজনীতিতে এমন সংলাপ অনুপস্থিত ছিল।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এই দেশে দীর্ঘমেয়াদে বা এমনকি স্বল্পমেয়াদেও একটা জাতীয় পুনর্মিলন প্রক্রিয়া দরকার, যা দেশকে একত্রিত করবে।’
তিনি বলেন, পুনর্মিলনের জন্য সব পক্ষের সদিচ্ছা প্রয়োজন, যার মধ্যে অতীতের নেতৃত্বের পক্ষ থেকেও ‘কীভাবে গভীরভাবে ভুল হয়েছিল’ তা স্বীকার করার প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি পরামর্শ দেন, নির্বাচন শেষে এমন সংলাপ শুরুর উপযুক্ত সময় তৈরি হতে পারে, যখন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে ঐক্য ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে মনোযোগ দিতে হবে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে আগস্ট ২০২৪-এর পর শুরু হওয়া সংস্কার কার্যক্রমে অটল থাকতে হবে।
‘দেশের ভবিষ্যতের জন্য এই সংস্কার প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,’ তিনি বলেন, উল্লেখ করে যে জার্মানি ও অন্যান্য ইউরোপীয় অংশীদাররা বাংলাদেশকে এই পথেই এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করবে।
অপসারিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর অতীতের ক্ষমতার অপব্যবহারের বিচার প্রয়োজন, তবে এই প্রক্রিয়া অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা, ন্যায়বিচার ও যথাযথ আইনি মানদণ্ডের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
অর্থনৈতিক প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, ফ্রান্স থেকে এয়ারবাস বিমান কেনা-সংক্রান্ত বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত দ্বিপাক্ষিক ও ইউরোপীয় অর্থনৈতিক সম্পর্কের সামগ্রিক পরিবেশকে প্রভাবিত করতে পারে।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্তের কারণে বড় কোনো সংকট নাও হতে পারে, তবে এটি অবশ্যই অর্থনৈতিক সম্পর্কের সামগ্রিক পরিবেশে প্রভাব ফেলবে।
জার্মানি ইউরোপে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার উল্লেখ করে তিনি বলেন, বড় ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তে নির্ভরযোগ্যতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শিক্ষার্থী ভিসা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত লোট্জ বলেন, জার্মানিতে পড়াশোনার আগ্রহ বাড়ছে, তবে বিপুলসংখ্যক জাল বা ভুল কাগজপত্রের কারণে আবেদন প্রক্রিয়া ধীরগতির হচ্ছে।
‘এর ফলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সত্যিকারের শিক্ষার্থীরাও,’ তিনি বলেন এবং জানান যে প্রকৃত আবেদনের প্রক্রিয়া দ্রুততর করার চেষ্টা চলছে।
ডিক্যাব সভাপতি একেএম মইনুদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফুজ্জামান মামুন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।



























