মিথ্যা অভিযোগে মানববন্ধন: ওয়ালটন–মার্সেলবিরোধী নতুন প্রতারক নেটওয়ার্কের পর্দা ফাঁস
বাংলাদেশের একমাত্র দেশীয় বৃহৎ ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন–মার্সেল–এর বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে সুনাম ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার জাতীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। “ওয়ালটন ও মার্সেল ক্ষতিগ্রস্ত ডিলার ঐক্য পরিষদ, বাইপাল–আশুলিয়া, ঢাকা” নামে অ-নিবন্ধিত ও অপ্রমাণিত একটি ব্যানার ব্যবহার করে আয়োজিত ওই মানববন্ধনে গিয়ে দেখা যায়—অভিযোগ, পরিচয় ও উপস্থিত অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্য—সবকিছুই ছিল সন্দেহজনক ও প্রশ্নবিদ্ধ।
ভুয়া পরিচয় ও অজ্ঞ অংশগ্রহণকারীদের ভিড়ে মানববন্ধনে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তিকে যখন প্রতিবেদক ডিলার কোড, শোরুমের তথ্য এবং অভিযোগের ভিত্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করেন—তাদের কেউই সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি।
এক ব্যক্তি প্রথমে নিজেকে ওয়ালটনের ডিলার দাবি করলেও পরে জানান, তিনি আসলে শুধু একটি শোরুমের কর্মচারী।
আরেকজন বলেন তিনি “মিনিস্টার কোম্পানির বিরুদ্ধে মানববন্ধনে এসেছেন”; কিন্তু ওয়ালটন–মার্সেল লেখা ব্যানারের নিচে কেন দাঁড়িয়ে আছেন—এ প্রশ্নেরও কোনো যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
আরেকজন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ওয়ালটনের ডিলার পরিচয় দিয়ে দাবি করেন যে তিনি কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন; কিন্তু মামলার কপি চাইলে কোনো নথি দেখাতে ব্যর্থ হন, বরং পরে সাংবাদিকদের ওপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান।
তিনজন অংশগ্রহণকারী নিজেদের ডিলার হিসেবে পরিচয় দিলেও তাদের কেউই ডিলার কোড জানাতে পারেননি। ফলে ধীরে ধীরে পুরো আয়োজনের অসত্যতা প্রকাশ্যে আসে।
সব মিলিয়ে স্পষ্ট হয়—মানববন্ধনটি প্রকৃত ডিলারদের দাবি নয়; বরং একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিমূলক আয়োজন।
বাকিতে পণ্য নিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে এখন উল্টো কোম্পানিকে দোষারোপ ওয়ালটন–মার্সেলের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানায়, গাজীপুরের একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানির কাছ থেকে বাকিতে পণ্য নিয়ে সেই অর্থ পরিশোধ না করেই বারবার নতুন করে পণ্য দাবি করছিলো। মানবিক দিক বিবেচনা করে কোম্পানি তাদেরকে পুনরায় পণ্য দিলেও তারা দ্বিতীয় দফার বাকি অর্থও ফেরত দেয়নি বরং নতুন করে একই দাবি তুলতে শুরু করেছে যখন কোম্পানি আইনানুগ প্রক্রিয়ায় পাওনা ফেরত চাইছে—তখনই এই চক্র ভাড়াটে লোকজন জড়ো করে ভুয়া মানববন্ধনের আয়োজন করে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এটিকে দেশের বৃহৎ স্থানীয় শিল্পকে বেকায়দায় ফেলতে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে।
দেশীয় শিল্পকে দুর্বল করা হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে জাতীয় অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা ঘটনাটিকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক হিসেবে দেখছেন।
অর্থনীতিবিদ ও শিল্প বিশ্লেষকরা বলেন, ১.পরিকল্পিত অপতৎপরতা দেশীয় ব্র্যান্ডকে বিদেশে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বাংলাদেশের একমাত্র বড় ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ওয়ালটন–মার্সেল দেশের সুনাম বহির্বিশ্বে সমুন্নত রাখছে। এর বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা বিদেশি প্রতিদ্বন্দ্বীদের সুবিধা করে দিতে পারে। ২.ডিলার কোডবিহীন মানববন্ধনকে কেউই বৈধ দাবি হিসেবে দেখছে না (ডিলার কোড) চুক্তি নথি বা লেনদেন–সংক্রান্ত কোনো কাগজ ছাড়া ডিলার দাবি করা আইনিভাবে প্রতারণার শামিল।) ৩.বিশেষজ্ঞদের মতে- ভুয়া ব্যানার ব্যবহার ও ভাড়াটে অংশগ্রহণকারী, মিথ্যা অভিযোগ ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য—এসবই অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ড।
দেশের মানুষ যেখানে প্রতিদিন কর্মহীন হচ্ছে, সেখানে একটি প্রতিষ্ঠান লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে, সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এভাবে মিথ্যা অপপ্রচার চলতে পারে না। দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।
ওয়ালটন–মার্সেল বাংলাদেশে প্রায় ৩০–৪০ হাজার সরাসরি চাকরি লক্ষাধিক পরোক্ষ কর্মসংস্থান রপ্তানির মাধ্যমে দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ইলেকট্রনিক্স খাতকে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি-নির্ভর পর্যায়ে উন্নীত করেছে। এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে ভুয়া দাবিদাওয়া ও অপপ্রচার—অনেকের মতে দেশের অর্থনীতির জন্য হুমকি।
আইনজ্ঞরা মনে করেন, ওয়ালটন–মার্সেলের মতো শিল্প প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে পরিকল্পিত বিভ্রান্তির চক্রকে শাস্তি না দিলে ভবিষ্যতে দেশীয় উৎপাদন খাত বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়বে।
২৫ নভেম্বরের মানববন্ধনের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে— এটি কোনো প্রকৃত ডিলারের অধিকার আদায়ের আন্দোলন নয়; বরং আত্মসাৎকারী চক্রের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরানোর অপচেষ্টা। ভাড়াটিয়া কর্মী, ভুয়া ব্যানার, ভুল তথ্য ও প্রশ্নের জবাবহীনতা—সবকিছু মিলিয়ে পুরো আয়োজনটি দেশের সবচেয়ে সফল দেশীয় ব্র্যান্ডের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপপ্রচারের এক জঘন্য উদাহরণ।দেশীয় শিল্প রক্ষায় অবিলম্বে তদন্ত করে এই চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।



























