পশ্চিমবঙ্গ সফরে কী বার্তা দেবেন মোদি?

আগামী ২৯ মে পশ্চিমবঙ্গ সফরে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপর রাজ্যটি সফরে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সরকারি কর্মসূচির অংশ হলেও এই সফরের রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
কাশ্মিরের পেহেলগামে হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর পাকিস্তানে অপরাশেন সিঁদুর অভিযান চালায় ভারত। ভারতের অভিযানের জবাবে পাল্টা হামলা চালায় পাকিস্তানও। এসব মিলিয়ে উত্তপ্ত ভারতের রাজনীতিক অঙ্গন।
এদিকে আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার নির্বাচন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নানা সমীকরণ বিবেচনায় পশ্চিমবঙ্গ প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর নিয়ে চলছে আলোচনা।
আগামী ২৯ মে দুপুর ১২টায় আলিপুরদুয়ার প্যারেড গ্রাউন্ডে এক কর্মসূচিতে যোগ দেবেন মোদি। ইতোমধ্যে বৃষ্টিতে প্যারেড গ্রাউন্ডে পানি জমে থাকায় মাঠ সংস্কারের কাজ চলছে।
অপারেশন সিঁদুরের পরে এই প্রথম রাজ্যটিতে সফর মোদির। প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি রয়েছে উত্তরবঙ্গের হাসিমারা বিমান বাহিনী ছাউনির কাছে। শিলিগুড়ি লাগোয়া চিকেনস নেক ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের সেভেন সিস্টার্স-এর ক্ষেত্রে পূর্ব সীমান্তের নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারি কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি মোদি রাজনৈতিক সভা করতে চলেছেন। গত মঙ্গলবার দুপুরে আলিপুরদুয়ার প্যারেড গ্রাউন্ডে হাজির হন একঝাঁক বিজেপি নেতা। ছিলেন সাংসদ মনোজ টিগ্গা, ফালাকাটার বিধায়ক দীপক বর্মন, কালচিনির বিধায়ক বিশাল লামা। তারা মাঠ ঘুরে দেখার পরে শুরু হয় জল্পনা।
বিজেপি নেতা মনোজ টিগ্গা বলেন, “অপারেশন সিঁদুরের সাফল্যের পর সেনাকে সম্মান জানাতে এবং কেন্দ্রের ভূমিকা তুলে ধরতেই প্রধানমন্ত্রীর এই সফর। তার আগে মাঠ দেখতে গিয়েছিলাম।”
রাজনৈতিক সভা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সারা দেশে প্রধানমন্ত্রী একাধিক সভা করছেন। তারই অংশ হিসাবে আলিপুরদুয়ারে সভা হবে৷ ২০১৬ সালের পর ফের একবার প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে সাধারণ মানুষ উচ্ছ্বসিত।”
দেশের পশ্চিম প্রান্তে পাকিস্তানের সঙ্গে চলছে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি। সেই পরিস্থিতি সামলাতে কঠোর ছিল মেদি সরকার। এদিকে পূর্বদিকের প্রতিবেশী বাংলাদেশে ক্ষমতার হাতবদল হয়েছে। বাংলাদেশের নতুন সরকারের সাথেও মোদির প্রশাসনের কূটনৈতি সম্পর্ক এখনো স্বাভাবিক হয়নি। তাই এই সীমান্ত নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কী বার্তা দেন, সেদিকে নজর রয়েছে।
তবে শুধু আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে নয়, স্থানীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহের এই সংক্ষিপ্ত সফর গুরুত্বপূর্ণ। উত্তরবঙ্গ বিজেপির শক্ত ঘাঁটি হলেও সেখানে কিছুটা জমি পুনরুদ্ধার করেছে তৃণমূল।
কিছুদিন আগেই টিগ্গার ছেড়ে যাওয়া আসন মাদারিহাটে উপনির্বাচনে বিজেপির ঘাঁটি দখল করেছে রাজ্যের শাসক দল। সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন চা বলয়ের নেতা ও সাবেক বিজেপি সাংসদ জন বার্লা। প্রধানমন্ত্রীকে সামনে রেখে এই ক্ষতির মোকাবিলা করতে চাইছে বিজেপি যাতে আর জমি তারা না হারায়, এমনটাই মত রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের।
সরকারি সফরে রাজনৈতিক ফায়দা!
প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিজেপির এই দুই নেতা নিজেদের ভোটের বাক্স সমৃদ্ধ করতে দলটির পক্ষে তুরুপের তাস হয়ে কাজ করেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। আর তাই তাদের এই সফর বিধান সভার নির্বাচনের আগে নিজেদের পাল্লা ভারি করার চেষ্টার অংশ হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
ফলে সরকারি কর্মসূচিতে রাজ্যে এলেও রাজনৈতিক লক্ষ্য থাকবেই, এমনটাই অনেকের মত।
সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য বলেন, “নরেন্দ্র মোদি এখনো বিজেপির জন্য সেরা ভোট ক্যাচার। অপারেশন সিঁদুরের পরে তাকে আরও বেশি তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গে ডেলি প্যাসেঞ্জারি করেছিলেন। তাতেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের দুরমুশ করে দেন। এবার তাই অনেক আগে থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিজেপি।”
এখনো যে মোদি-শাহ যুগলবন্দি বিজেপির সেরা টেক্কা, সেটা নিয়ে দ্বিমত করছেন না সুমন। তিনি বলেন, “ফুটবল, ক্রিকেট বা অন্যান্য খেলায় যুগলবন্দির একটা গুরুত্ব আছে। এক সময়ে সুনীল গাভাস্কার ও কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্তের জুটি ছিল। টেনিসে ছিল লিয়েন্ডার পেজ ও মহেশ ভূপতির জুড়ি। এক্ষেত্রে একজন আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে সামনে এসে আক্রমণ করবেন, আর একজন পিছন থেকে খেলাটা ধরে রাখবেন। গত ১০ বছরে বিজেপি যে সাফল্য পেয়েছে, সেক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদী সামনে এসে ব্যাট চালিয়েছেন এবং অনেকটা পিছন থেকে গুটি সাজিয়ে বাকি বিষয়টা ঠিক করেছেন অমিত শাহ। এই যুগলবন্দি বিজেপিকে তো সাফল্য এনে দিয়েছে বছরের পর বছর৷ সেই সাফল্যের আশায় তারা পশ্চিমবঙ্গ এগোচ্ছে।”
তবে সফরটিকে পুরোপুরি রাজনৈতিক বলতে নারাজ সাংবাদিক দীপ্তেন্দ্র রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচি অনেকদিন আগে থেকেই নির্ধারিত হয়ে থাকে। এই সফরের সঙ্গে অপারেশন সিঁদুরের সম্পর্ক নেই। আর এই ধরনের সফর মানে যে রাজনৈতিক প্রচার করতে আসা, সেটাও সবসময় ভাবা ঠিক নয়। তবে রাজনৈতিক কারণ যে একেবারেই নেই, এমনটাও বলা যায় না। ফলে দুটো সম্ভাবনাই থাকে৷ আগে থেকে যে কর্মসূচি নির্ধারিত হয়ে আছে, তার সঙ্গে প্রচার জুড়ে যেতে পারে৷ মোদির যে জনসভা আছে, সেখানে তিনি অপারেশন সিঁদুর নিয়ে বলবেন, এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। নির্বাচনের এত আগে বলে এটাকে ভোটের বাদ্যি তকমা দিতে আমি রাজি নই। ভোটের চার পাঁচ মাস আগে হলে এটা বলা যেত।”