যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানাপোড়েনে রাজনৈতিক ফায়দা খুঁজছেন মোদি!

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গত আট বছরের সবচেয়ে বড় কর-ছাড়ের ঘোষণা সরকারি রাজস্বে চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে দেশটির ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মোদির এই সিদ্ধান্তে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলছেন, ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য সংঘাতে মোদির ভাবমূর্তিকেই শক্তিশালী করবে।
২০১৭ সালের পর বৃহত্তম কর সংস্কারের এই পদক্ষেপে নরেন্দ্র মোদির সরকার পণ্য ও পরিষেবা করের (জিএসটি) জটিল কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে দেশটিতে আগামী অক্টোবর থেকে ভোক্তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও ইলেকট্রনিক পণ্যের দাম কমবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নেসলে, স্যামসাং, এলজি ইলেকট্রনিকসের মতো বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি বিজেপি সরকারের নেওয়া এই পদক্ষেপের সুফল পাবে।
একই সময়ে গত শুক্রবার ভারতের স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশীয় পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ২৭ আগস্ট থেকে ভারতের আমদানির ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করায় দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বর্জনের যে ডাক দেওয়া হয়েছে, তাতে রসদ জুগিয়েছে তার আহ্বান।
তবে বিজেপি সরকারের কর-ছাড়ের পরিকল্পনার খেসারতও গুনতে হবে। কারণ ভারতের অন্যতম রাজস্ব আহরণের অন্যতম প্রধান উৎস জিএসটি। ভারতের আইডিএফসি ফার্স্ট ব্যাংক বলছে, এই ছাড়ে ভারতের জিডিপি আগামী ১২ মাসে ০.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হলেও দেশটির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে প্রতি বছর প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কর-ছাড়ের সিদ্ধান্তে দেশটির দুর্বল শেয়ারবাজার চাঙা হয়ে উঠতে পারে। নয়াদিল্লি-ভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ফেলো রশীদ কিদওয়াই বলেছেন, বিহারের গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য নির্বাচনের আগে কড়-ছাড়ের পরিকল্পনা নরেন্দ্র মোদির জন্য রাজনৈতিক সুবিধা বয়ে আনতে পারে।
তবে বিজেপি সরকারের কর-ছাড়ের পরিকল্পনার খেসারতও গুনতে হবে। কারণ ভারতের অন্যতম রাজস্ব আহরণের অন্যতম প্রধান উৎস জিএসটি। ভারতের আইডিএফসি ফার্স্ট ব্যাংক বলছে, এই ছাড়ে ভারতের জিডিপি আগামী ১২ মাসে ০.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হলেও দেশটির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে প্রতি বছর প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কর-ছাড়ের সিদ্ধান্তে দেশটির দুর্বল শেয়ারবাজার চাঙা হয়ে উঠতে পারে। নয়াদিল্লি-ভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ফেলো রশীদ কিদওয়াই বলেছেন, বিহারের গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য নির্বাচনের আগে কড়-ছাড়ের পরিকল্পনা নরেন্দ্র মোদির জন্য রাজনৈতিক সুবিধা বয়ে আনতে পারে।
তিনি বলেন, ‘‘আয়করের তুলনায় জিএসটি হ্রাস করা হলে তা সবার ওপর প্রভাব ফেলে। দেশের মাত্র ৩ থেকে ৪ শতাংশ জনগণ আয়কর পরিশোধ করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতিতে প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়ে নরেন্দ্র মোদি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’
রশীদ কিদওয়াই বলেছেন, কড়-ছাড়ের সিদ্ধান্ত দেশের শেয়ারবাজারের জন্যও সহায়ক হবে। বর্তমানে এটি রাজনৈতিকভাবেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দেশের বিপুলসংখ্যক খুচরা বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
ভারত ২০১৭ সালে বড় ধরনের কর ব্যবস্থা চালু করে; যা রাজ্যের বিভিন্ন কর খাতকে একীভূত করে জাতীয় পর্যায়ে জিএসটি চালুর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে প্রথমবারের মতো একক কাঠামোয় নিয়ে আসে। তবে জটিল প্রক্রিয়ার কারণে স্বাধীনতার পর ভারতের সবচেয়ে বড় এই কর সংস্কার নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এই ব্যবস্থায় পণ্য ও সেবার ওপর চার ধাপে কর আরোপ করা হয়। এই করের হার যথাক্রমে ৫, ১২, ১৮ এবং ২৮ শতাংশ।
গত বছর ক্যারামেল পপকর্নের ওপর ১৮ শতাংশ কর আরোপের ঘোষণা দেয় দেশটির সরকার। কিন্তু নোনতা ধাঁচের ক্যারামেল পপকর্নের জন্য এই কর ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়; যা জিএসটির জটিলতার স্পষ্ট উদাহরণ বলে তখন অনেকে সমালোচনা করেন।
নতুন ব্যবস্থায় ২৮ শতাংশ কর স্তর বিলুপ্ত করার কথা রয়েছে। আর এই কর সীমার আওতায় আছে গাড়ি ও বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিকস পণ্য। পাশাপাশি ১২ শতাংশ কর স্তরের প্রায় সব পণ্যকেই ৫ শতাংশ স্তরে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। এতে দেশটির বাজারের বিভিন্ন ধরনের ভোক্তা সামগ্রী ও প্যাকেটজাত খাবারের দাম আরও কমবে। দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে ভারতের মোট প্রায় ২৫০ বিলিয়ন ডলারের জিএসটি রাজস্ব আহরণ করা হয়। এর মধ্যে ১৬ শতাংশই এসেছিল ২৮ ও ১২ শতাংশ কর স্তরের পণ্য থেকে।
ভারতের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য হিসেবে মনে করা হয় দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য বিহারকে। এই রাজ্যে আগামী নভেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। দেশটির ভোটভাইব নামের একটি সংস্থার সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, দেশে কর্মসংস্থান সংকটের কারণে জনপ্রিয়তার হিসেবে নরেন্দ্র মোদির বিরোধীরা এগিয়ে রয়েছেন।
দেশটির জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান পারফেক্ট রিলেশনসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ দিলীপ চেরিয়ান বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যেকোনও ধরনের কর ছাড়ের পদক্ষেপ নেওয়া হলে তা জনগণের মাঝে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। তবে অবধারিতভাবেই এই কর ছাড়ের সময় নির্বাচনকে ঘিরেই নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, এটি সরকারের হতাশা এবং একইসঙ্গে উচ্চ ও দমবন্ধ করা করের বিরুদ্ধে ব্যাপক জন-অসন্তোষের স্বীকৃতিও প্রকাশ করে।’’
নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) দেশটিতে কর-ছাড়ের ঘোষণাকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাচ্ছে। সরকারের কর-ছাড়ের ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে বিজেপি লিখেছে, দীপাবলিতে ‘‘সহজতর কর ও বেশি সঞ্চয়ের উজ্জ্বল উপহার অপেক্ষা করছে প্রতিটি ভারতীয়র জন্য।’’
ভারতীয় পণ্যে ট্রাম্পের আকস্মিক অতিরিক্ত শুল্ক ও জরিমানা আরোপের ঘোষণার পর দেশের কৃষক, জেলে ও পশুপালকদের সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মোদি। ভারতের বিশাল কৃষি ও দুগ্ধ খাত মার্কিন ব্যবসায়ীদের জন্য উন্মুক্ত না করা এবং রাশিয়ার তেল কেনা অব্যাহত রাখায় ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। মার্কিন এই অতিরিক্ত শুল্ক আগামী ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
তার আগে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আগামী ২৫ থেকে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত নতুন বাণিজ্য আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও শনিবার তা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র।