বৃহস্পতিবার ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:২০, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে নিহত ৭৩

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে নিহত ৭৩
সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় একদিনে অন্তত ৭৩ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু গাজা সিটিতেই প্রাণ হারিয়েছেন ৪৩ জন। এই পরিস্থিতিকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস।

বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, বুধবার গাজা সিটি ও আশপাশে ইসরায়েলের তীব্র বোমাবর্ষণে এই প্রাণহানি ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, আশ্রয়কেন্দ্র ও তাঁবুতে থাকা পরিবারগুলোকেই লক্ষ্যবস্তু করছে ইসরায়েলি সেনারা।

এক গাজাবাসী সাবরিন আল-মাবহুহ বলেন, “আমার ভাইকে তার ঘরেই হত্যা করেছে। স্ত্রী-সন্তানসহ কাউকে বাঁচতে দেয়নি।”

শেখ রাদওয়ান এলাকার একটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া মানুষের তাঁবুতে গ্রেনেড হামলার পর আগুন ধরে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা জাকিয়া সামির ভাষ্য, “শেখ রাদওয়ান জ্বলছে। যদি দখল ঠেকানো না যায়, আমরা সবাই মারা যাব। যারা চুপচাপ দেখছে, তাদের আমরা ক্ষমা করব না।”

গাজার গণমাধ্যম দফতরের তথ্যে জানা যায়, গত তিন সপ্তাহে ইসরায়েল অন্তত ১০০ রোবট বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বহু আবাসিক এলাকা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। শুধু গাজা সিটিতেই ১৩ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ১০০ জন নিহত হয়েছেন।

আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ বলেন, “পুরো মহল্লা একের পর এক ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। মানুষ কয়েক দশকে যা গড়েছিল, সব হারাচ্ছে। মনে হচ্ছে এই দুঃস্বপ্নের কোনো শেষ নেই।”

বুধবার হামাস জানায়, তারা সর্বাত্মক যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের শর্তে সব ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বিষয়ে মন্তব্য করেছিলেন।

উত্তর গাজায় আল-জারিসি পরিবারের বাড়িতে বিমান হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় হামাস একে ভয়াবহ যুদ্ধাপরাধ আখ্যা দিয়ে বলেছে, এটি ফিলিস্তিনিদের ধ্বংসে একটি “নিয়মতান্ত্রিক অভিযান।”

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, অবরোধের কারণে খাদ্য প্রবেশে বাধা থাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় অপুষ্টি ও অনাহারে আরও ছয়জন মারা গেছে। চলমান অবরোধে এখন পর্যন্ত ক্ষুধাজনিত কারণে ৩৬৭ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, এর মধ্যে ১৩১ শিশু।

জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে, গাজা সিটি দখল অভিযান চলতে থাকলে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে। কেবল আগস্টের শেষার্ধেই জোরপূর্বক নতুন করে ৮২ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছেন।

ইউনিসেফ সতর্ক করেছে— ২০২৬ সালের মাঝামাঝি নাগাদ পাঁচ বছরের নিচের ১ লাখ ৩২ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টিতে মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়বে। বর্তমানে অন্তত ৩ লাখ ২০ হাজার শিশু ভয়াবহ ক্ষুধার মুখে রয়েছে।

খাদ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক সংস্থা আইপিসি জানিয়েছে, উত্তর গাজায় ইতোমধ্যে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে এবং তা দ্রুত দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে। সহায়তাকর্মীদের মতে, সর্বাত্মক অবরোধের কারণে প্রতিদিন বেঁচে থাকাই গাজার মানুষের জন্য মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ের সমান হয়ে উঠেছে।

সম্পর্কিত বিষয়: