বুধবার ০৬ আগস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২

লাইফস্টাইল ডেস্ক :

প্রকাশিত: ১৫:৩৭, ৬ আগস্ট ২০২৫

৩০ দিন ভাত-রুটি ছাড়লে আসবে যেসব পরিবর্তন!

৩০ দিন ভাত-রুটি ছাড়লে আসবে যেসব পরিবর্তন!
সংগৃহীত

আজকাল অনেকেই ওজন কমানো বা সুস্থ থাকতে খাবারের তালিকা থেকে ভাত ও রুটি বাদ দিচ্ছেন। কারণ, এই দুই খাবারে প্রচুর কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা শরীরের শক্তির জন্য দরকার হলেও অতিরিক্ত হলে ওজন বাড়তে পারে। কিন্তু আপনি যদি একটানা ৩০ দিন ভাত আর রুটি না খান, তাহলে শরীরে কিছু বড়সড় পরিবর্তন দেখা দিতে পারে—কিছু ইতিবাচক, কিছু আবার একটু সাবধানে চলার মতো।

চলুন জেনে নিই, এক মাস ভাত-রুটি না খেলে শরীর ঠিক কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে।

১. শরীর চর্বি পুড়িয়ে শক্তি তৈরি করতে শুরু করে

যেহেতু আপনি ভাত-রুটি খাচ্ছেন না, শরীর তখন শক্তির জন্য চর্বিকে ব্যবহার করতে শুরু করে। এই প্রক্রিয়াকে বলে কিটোসিস। প্রথমে একটু দুর্বল লাগলেও কিছুদিন পর অনেকেই বলেন, তারা আগের চেয়ে বেশি শক্তি পাচ্ছেন এবং খাবারের পর ঝিমুনির সমস্যাও কমে গেছে।

২. ওজন কমে

প্রথম ৭ দিনে ১–২ কেজি ওজন কমতে পারে। তবে এর বেশিরভাগই পানি কমার কারণে হয়। যদিও এটা সাময়িক, তবুও ওজন কমতে দেখা গেলে অনেকেই আরও মোটিভেটেড হয়ে যান।

৩. রক্তে চিনির পরিমাণ ঠিক থাকে

যাদের ডায়াবেটিস বা ইনসুলিনের সমস্যা আছে, তাদের জন্য ভাত বা সাধারণ আটা বাদ দিয়ে ওটস, বার্লি বা মিলেট খাওয়া উপকারী হতে পারে, কারণ এগুলোর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম।

৪. হজমে কিছু পরিবর্তন হয়

অনেকেই বলেন, ভাত-রুটি না খেলে পেট অনেক হালকা লাগে। তবে পর্যাপ্ত আঁশ (ফাইবার) না খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তাই ভাত-রুটি না খেলেও শাকসবজি, বীজ বা বাদাম খাওয়া জরুরি।

৫. খিদে ও তৃষ্ণা বেড়ে যেতে পারে

ভাত-রুটি মানসিক শান্তিও দেয় অনেকের কাছে। হঠাৎ বাদ দিলে শরীর ও মনের মধ্যে খিদে বা খাবারের তীব্র চাহিদা তৈরি হতে পারে, বিশেষ করে টেনশন বা ঠান্ডা আবহাওয়ায়। তখন বিকল্প হিসাবে ফল, মিষ্টি আলু, দই-মুড়ি খেতে পারেন।

৬. কিছু পুষ্টির ঘাটতি হতে পারে

ভাত ও রুটিতে থাকে ভিটামিন বি, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি। এগুলো বাদ দিলে আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে আপনি মাল্টিগ্রেইন, জোয়ার, রাগি, আমরান্থ ইত্যাদি দিয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করছেন।

৭. নিজের খাওয়ার অভ্যাস সম্পর্কে সচেতন হবেন

৩০ দিন ভাত-রুটি না খেলে আপনি বুঝতে পারবেন, এসবের ওপর আপনি কতটা নির্ভরশীল ছিলেন। এটা আপনাকে আরও সচেতনভাবে খাওয়ার অভ্যাস গড়তে সাহায্য করবে।

তাহলে ভাত-রুটি কি একেবারেই বাদ দেওয়া উচিত?

না, একেবারেই না। বরং আপনি বুঝে-শুনে খাওয়ার অভ্যাস করুন। কার্বোহাইড্রেট আমাদের শক্তির বড় উৎস এবং মস্তিষ্ক ও হরমোনের কাজেও দরকার। কিন্তু সাদা চাল বা পরিশোধিত আটা বাদ দিয়ে আপনি স্বাস্থ্যকর বিকল্প বেছে নিতে পারেন।

- সাদা চালের বদলে ব্রাউন রাইস, আতপ চাল বা হাতের কুটা চাল

- সাধারণ আটার বদলে মাল্টিগ্রেইন, জোয়ার বা রাগির আটা

- খাওয়ার সঙ্গে সবজি ও প্রোটিন (ডাল, ডিম, মাছ, পনির) রাখুন

চাল-রুটির কিছু স্বাস্থ্যকর বিকল্প:

মিলেট (রাগি, বাজরা, জোয়ার) : ফাইবার ও খনিজে ভরপুর

কুইনোয়া, ডালিয়া, বাকউইট : পেট ভরায়, পুষ্টিও দেয়

ফুলকপির ভাত বা মিলেট রুটি : কম কার্বের চমৎকার বিকল্প

সবজি, ডাল, শাক : স্বাদে ও পুষ্টিতে ভরপুর

ভাত-রুটি ছাড়াই ৩০ দিন কাটানো মানে শরীর ও মনের জন্য একটা নতুন অভ্যাস তৈরি করা। এটা আপনাকে ওজন কমাতে, শক্তি বাড়াতে এবং আপনার খাওয়ার প্যাটার্ন সম্পর্কে সচেতন হতে সাহায্য করতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদে সাফল্য পেতে হলে ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি।

কার্বোহাইড্রেটকে ভয় না করে, তাকে বুঝে-শুনে খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।