নিশ্ছিদ্র ভদ্রতার আবরণ ছিঁড়ে যখন রাজপথে নামে ক্ষোভ, তখন হাতে তলোয়ার নয়—ডিম। সাদা, কোমল, মৃদু এক গোলাকার বস্তু, যা একদিকে প্রাত্যহিক পুষ্টির প্রতীক, অন্যদিকে প্রতিবাদের বিস্ফোরক বার্তা।

রাজনীতি মানেই মতপার্থক্য, আর মতপার্থক্য মানেই সংঘর্ষ—তবে সবসময় অস্ত্রের শব্দে নয়, কখনো কখনো ডিমের নীরব চিৎকারেও।
এই ‘নীরব প্রতিবাদ’ যেন একধরনের প্রতীকী নাটক, যেখানে মঞ্চে উঠে আসে গণবিরোধী বক্তব্য, স্বেচ্ছাচারিতা, বৈষম্য কিংবা নিছক অবজ্ঞা—আর দর্শক সারির কেউ হঠাৎ হাতে তুলে নেয় ডিম, ছুড়ে দেয় অন্যায়ের দিকে।
ইতিহাস যখন ডিমে লেখা
১৯১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী বিলি হিউজের দিকে ছোড়া সেই প্রথম ডিমের মতোই—প্রতিবাদের এক নরম কিন্তু স্পষ্ট ভাষা।
২০০১ সালে ব্রিটেনে উপ-প্রধানমন্ত্রীর ঘুষি ছোঁড়ার জবাব কিংবা ২০১৯ সালে ‘এগ বয়’-এর মাথার ওপরে ফেটে যাওয়া ডিম—সেগুলো হয়ে উঠেছিল সময়ের প্রতিচ্ছবি।
২০২৩-এর রাজা তৃতীয় চার্লস কিংবা ২০২৫-এর লন্ডনে মাহফুজ আলম—ঘটনার পেছনে যেমন ছিল রাজনৈতিক ক্ষোভ, তেমনই ছিল নিপীড়নের প্রতিচ্ছায়া।
প্রতীক যখন প্রতিবাদে রূপ নেয়
ডিম সহজ, ডিম সস্তা—তবু প্রতিক্রিয়ার জোয়ারে এটি সমুদ্রের মতোই গভীর হয়ে ওঠে।
সহজলভ্যতার সৌন্দর্য: রান্নাঘরের এক কোণে পড়ে থাকা ডিম মুহূর্তে হয়ে যায় প্রতিবাদের হাতিয়ার।
অপমানের মঞ্চে নায়ক: চোখের সামনে গায়ে ফেটে যাওয়া ডিম জনসমক্ষে একপ্রকার সামাজিক বিচারের প্রতীক।
মারাত্মক নয়, কিন্তু আলোড়নজাগানিয়া: কোনো দেহ ভেঙে দেয় না, বরং প্রতিষ্ঠানের ভিত নাড়িয়ে দেয়।
মিডিয়ার প্রিয় মুহূর্ত: ফোটোফ্রেমে বন্দী হওয়া সেই ডিম ছোড়ার দৃশ্য রাজনীতিকে ঠেলে দেয় রঙিন ব্যঙ্গের আলোয়।
আইন যেখানে বলে—"না!"
অভিনব এই প্রতিবাদ যেমন জনসাধারণের মধ্যে হাস্যরসের খোরাক, তেমনি পুলিশের নথিতে ‘অপরাধ’।
ডিম ছোড়া হয়তো কারও চোখে নিরীহ কাণ্ড, তবে অধিকাংশ দেশে এটি হামলা, জনশৃঙ্খলা ভঙ্গ, কিংবা অনৈতিক আচরণ হিসেবে চিহ্নিত।
ফলাফল—জরিমানা, কারাদণ্ড, কিংবা সামাজিক সেবা।
শেষে যা রয়ে যায়—চিত্রনাট্যের এক দৃশ্য
প্রতিবাদের ভাষা বদলায়।
কখনো তা গান হয়ে ওঠে, কখনো পোস্টার, কখনো রাস্তায় বসে থাকা নীরবতা।
কিন্তু ডিম ছোড়া এক অনন্য ধারা—একটি মুহূর্ত, যা হয়ে ওঠে প্রতিবাদের নাটকীয় চূড়ান্ত রূপ।
অতএব,
ডিম কেবল প্রোটিন নয়,
ডিম হয়ে উঠতে পারে প্রতিবাদের কবিতা,
একটা সমাজের ব্যর্থতার মুখে ছুঁড়ে মারা প্রশ্নবোধক চিহ্ন।