রোববার ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৯:৫০, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫

নয়াদিল্লিতে বিক্ষোভ নিয়ে ভারতের প্রেস নোট প্রত্যাখ্যান ঢাকার

নয়াদিল্লিতে বিক্ষোভ নিয়ে ভারতের প্রেস নোট প্রত্যাখ্যান ঢাকার
ছবি: সংগৃহীত

নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছে সংঘটিত কথিত বিক্ষোভ নিয়ে ভারতের প্রকাশিত একটি প্রেস নোট দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে অত্যন্ত সুরক্ষিত এলাকায় কীভাবে বিক্ষোভকারীরা প্রবেশ করতে পারল, তা নিয়ে গুরুতর নিরাপত্তা ঘাটতির প্রশ্ন তুলেছে ঢাকা।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন আজ বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারতের ওই প্রেস নোটের বিষয়টি আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। বিষয়টি এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যেন এটি খুবই সাধারণ ঘটনা, অথচ বাস্তবে তা নয়। আমাদের মিশন কূটনৈতিক এলাকার একেবারে ভেতরে অবস্থিত, কোনোভাবেই প্রান্তিক এলাকায় নয়।’

তিনি বলেন, ভারতের প্রেস নোটে বিষয়টি অতিসরলীকরণ করা হয়েছে, অথচ নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ মিশন একটি অত্যন্ত  সংবেদনশীল ও সম্পূর্ণ সুরক্ষিত কূটনৈতিক অঞ্চলের গভীরে অবস্থিত।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রশ্ন তোলেন, কীভাবে ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি দল, যাদের একটি উগ্র হিন্দু সংগঠনের সদস্য হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে, এমন সংবেদনশীল এলাকায় প্রবেশ করতে সক্ষম হলো। তিনি বলেন, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অনুমতি ছাড়া সেখানে পৌঁছানো সম্ভব হওয়ার কথা নয়।

তিনি বলেন, ‘ওরা (ভারত) বলছে ২০-২৫ জন হতে পারে, কিন্তু সেটাই মূল বিষয় নয়। প্রশ্ন হলো, কীভাবে একটি উগ্র হিন্দু সংগঠনের ২৫ বা ৩০ জন সদস্য একটি সংবেদনশীল ও সম্পূর্ণ সুরক্ষিত এলাকার এত ভেতরে প্রবেশ করতে পারল। স্বাভাবিক অবস্থায় তাদের সেখানে পৌঁছানোরই কথা নয়।’

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বিক্ষোভকারীরা কেবল বাংলাদেশে একজন হিন্দু নাগরিক হত্যার ঘটনায় স্লোগান দেয়নি, বরং অন্যান্য বক্তব্যও দিয়েছে। তিনি যোগ করেন, বাংলাদেশের সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো মূলত সঠিক এবং বিভ্রান্তিকর নয়, যেমনটি দাবি করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে হত্যার হুমকির কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ নেই, তবে এমন হুমকি দেওয়া হয়েছে, এমন কথা শোনা গেছে।

তিনি বলেন, ‘আমার কাছে হত্যার হুমকির কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ নেই, তবে আমরা এটাও শুনেছি যে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। সেটি হয়তো বিক্ষোভকারীদের কেউ বলেছিল। কিন্তু আমার মূল প্রশ্ন হলো, প্রথমত তারা কীভাবে এত দূর আসতে পারল এবং কীভাবে সেখানে হুমকি দিতে পারল?’

আন্তর্জাতিক রীতিনীতির কথা উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, সাধারণত বিক্ষোভকারীদের আগেই কর্তৃপক্ষকে জানাতে হয় এবং পুলিশ তাদের দূরত্বে আটকে দেয়। কখনো কখনো কেবল একজন বা দুজন প্রতিনিধিকে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, ‘এখানে যা ঘটেছে, আমরা তা মানতে পারিছি না।’

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ মনে করে এ ঘটনায় স্বাভাবিক নিরাপত্তা বিধি ও প্রটোকল যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সে দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে অবহিত করেছে এবং আশা প্রকাশ করেছে, ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি আর সৃষ্টি হতে দেওয়া হবে না।

ঢাকার প্রতিবাদের ধরন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উভয় পক্ষ কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছে এবং নিজ নিজ অবস্থান জানাচ্ছে। তবে ভারতের প্রেস নোট প্রকাশের পর বাংলাদেশ প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢাকা এখনো ভারতের ওপর আস্থা রাখে যে তারা যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেবে। তবে পরিস্থিতির অবনতি হলে উপস্থিতি সীমিত করার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ‘এটি শুধু স্লোগানের বিষয় নয়।’ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, হাইকমিশনার ও তাঁর পরিবার মিশন প্রাঙ্গণেই বসবাস করেন এবং সে সময় সেখানে মাত্র দুইজন নিরাপত্তাকর্মী থাকায় তারা হুমকির মুখে পড়েছেন।

তিনি বলেন, কূটনৈতিক মিশন ও কর্মীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা স্বাগতিক দেশের দায়িত্ব। বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং এসব বক্তব্য বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানই প্রতিফলিত করে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশে একজন নাগরিকের নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে সংখ্যালঘু নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে এবং একাধিক গ্রেপ্তারও হয়েছে।

তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা পুরো অঞ্চলেই ঘটে এবং প্রতিটি দেশেরই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে। বাংলাদেশ সে দায়িত্ব পালন করছে এবং অন্যদেরও একইভাবে কাজ করা উচিত।

স্থানীয় সময় শনিবার রাত আনুমানিক ৯টার দিকে ‘অখণ্ড হিন্দু রাষ্ট্র সেনা’-র ব্যানারে একদল উগ্র হিন্দু কর্মী দিল্লিতে বাংলাদেশ হাউসের প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ করে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়