বুধবার ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

সংবাদ পরিক্রমা ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:২২, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

সব হারিয়ে মানবিক বিপর্যয়ের মুখে কড়াইল বস্তিবাসী

সব হারিয়ে মানবিক বিপর্যয়ের মুখে কড়াইল বস্তিবাসী
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দেড় হাজারেরও বেশি পরিবার রাতারাতি সব হারিয়ে নিদারুণ অসহায় অবস্থায় পড়েছে। আগুনে ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মনে এখন একটাই প্রশ্ন—এ অবস্থায় তারা কোথায় আশ্রয় নেবে?

মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে বস্তির ঘিঞ্জি এলাকায় হঠাৎ আগুন ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে ছুটে এসে প্রায় পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ততক্ষণে পুরো এলাকার কাঁচা ঘরের সারি পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে যায়। রাত নামতেই হাজারো মানুষ বাধ্য হয় খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে।

অগ্নিকাণ্ডের পর বস্তিজুড়ে কান্না, হতাশা আর অসহায়ত্বে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।

সাত বছর ধরে কড়াইলে বসবাস করা লাভলী বেগম বলেন, “এখানে যা ছিল, সব আগুন নিয়ে গেছে। কিস্তিতে কেনা জিনিসপত্র, সঞ্চয়ের টাকা, বাচ্চাদের কাপড়—কিছুই আর রইল না। এখন রাত হলে আমরা কোথায় যাব? বাচ্চাদের নিয়ে কীভাবে থাকব?”

তার স্বামী ভ্যানচালক মোহসিন আলী জানান, “ঘরে আগুন লেগেছে শুনে ছুটে এসেছি, কিন্তু তখন কিছু বাঁচানোর সুযোগ ছিল না। সব শেষ। এখন পরিবার নিয়ে কোথায় আশ্রয় নেব—ভাবতেই মাথা ঘুরে যায়।”

মাত্র দুই মাস আগে বস্তিতে উঠে থাকা দিনমজুর শামসুল ইসলামও সব হারিয়ে হতভম্ব। তিনি বলেন, “আগুন এত দ্রুত ছড়িয়েছিল যে কিছুই বের করতে পারিনি। চারদিকে ধোঁয়া আর আগুনে দম বন্ধ হয়ে আসছিল।”

রাতে কোথায় ছিলেন—এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা বড় মানুষ, যেমন-তেমন কাটে। কিন্তু বাচ্চাদের নিয়ে সমস্যা হয়েছে। ওরা খামারবাড়ির মাঠের পাশে ফুফুর সঙ্গে বিছানা পেতে রাত কাটিয়েছে।”

ঘর হারিয়ে খোলা জায়গায় থাকতে বাধ্য হওয়ার পাশাপাশি খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট ক্ষতিগ্রস্তদের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। স্থানীয় কিছু স্বেচ্ছাসেবী এবং কয়েকটি সংগঠন খাবার-পানি দেওয়ার চেষ্টা করছে, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

স্থানীয় বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন জানান, “এলাকার দুই হাজারের মতো মানুষ সব হারিয়ে রাস্তার পাশে, খোলা মাঠে রাত কাটিয়েছে। কারো পক্ষে এত মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। কিছু রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন খাবার-পানি দিচ্ছে, কিন্তু তা খুবই অপ্রতুল।”

তিনি আরও জানান, “জামায়াতের কয়েকজন প্রতিনিধি রাতে খাবার-পানি দিয়েছে। আরও কয়েকটি সামাজিক সংগঠনও চেষ্টা করছে, কিন্তু এত মানুষের সামনে তা সামান্যই।”

সর্বশেষ

জনপ্রিয়