কোরবানির মৌসুমে চামড়া নিয়ে পুরনো সংকট

রাজধানীতে লবণ ছাড়া বড় এবং মাঝারি আকারের গরুর কাঁচা চামড়া ৬০০ থেকে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর যেসব গরুর চামড়া আকারে তুলনামূলক ছোট এবং মান কিছুটা খারাপ, সেগুলোর দাম ছিল ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। ঢাকার বাইরের বাজারে চামড়ার দাম আরও কম।
চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের দিন রাত ১২টা পর্যন্ত চামড়ার ভালো দাম পাওয়া গেলেও পরদিন থেকেই দাম পড়ে যায়। তাদের দাবি, চামড়ায় বিভিন্ন রোগের প্রভাব, সংরক্ষণের ঘাটতি এবং বাজার সিন্ডিকেটের কারণে দাম পড়ে গেছে। ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ (পক্স), অ্যানথ্রাক্স ওমোটাতাজাকরণের কারণে অনেক চামড়ায় গুটি ও দাগ পড়েছে। এতে প্রক্রিয়াজাতকরণের অনুপযোগী হওয়ায় প্রায় ৩০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়েছে বলে দাবি ট্যানারি মালিকদের।
পোস্তা চামড়া বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, চলতি মৌসুমে তাদের লক্ষ্য ছিল প্রায় ৮০ হাজার চামড়া সংগ্রহের, কিন্তু আর্থিক সংকট এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কোরবানি কম হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
ব্যাংক ঋণের জটিলতার কারণে অনেকেই চাহিদামতো চামড়া কিনতে পারেননি। পোস্তা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. টিপু সুলতান বলেন, “ব্যাংক থেকে ঋণ না পাওয়ায় চামড়া কেনা কঠিন হয়ে পড়েছে।”
সরকারি পর্যায় থেকে অবশ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার দাবি করা হচ্ছে। শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান জানান, এবার সারাদেশে প্রায় ৩ লাখ ৭৮ হাজার পিস চামড়া সাভারের শিল্পনগরীতে পৌঁছেছে এবং ঢাকায় রয়েছে আরও সাড়ে ৭ লাখ পিস। চামড়া শিল্পের সুরক্ষায় সরকার ৩০ হাজার টন লবণ বিতরণ করেছে বলেও জানান তিনি।
তবে উপদেষ্টা স্বীকার করেছেন, অনেক ক্ষেত্রে চামড়ায় দেরিতে লবণ দেয়া হয়েছে, যার ফলে কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়া যায়নি। তার ভাষায়, “চামড়ায় দেরিতে লবণ দেয়ার কারণে অনেকেই ভালো দাম পাননি। তবে লবণজাত চামড়ার বাজার ভালো আছে।” তিনি আরও বলেন, “চলতি বছর খুব কম সংখ্যক চামড়া নষ্ট হয়েছে সরকারের তৎপরতায়।”
অন্যদিকে, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন দাবি করেছেন, চামড়া সরকার নির্ধারিত দামেই বিক্রি হয়েছে। সাতক্ষীরার শ্যামনগরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে সাড়ে সাত লাখ মেট্রিক টন লবণ বিতরণ করা হয়েছে, প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে ৮৬ হাজার কসাইকে এবং ২১৫ কোটি টাকার প্রণোদনা দেয়া হয়েছে ঈদের আগেই।”
তবে কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী ও আড়তদারের অনিয়মের কারণে সমস্যা তৈরি হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। “কাঁচা চামড়ায় যদি লবণ না দেয়া হয়, তাহলে তো তা পচে যাবে, তার কোনো দাম নেই,” বলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
দেশে বছরে চামড়া সংগ্রহের প্রায় ৬০ শতাংশই হয়ে থাকে কোরবানির মৌসুমে। অথচ সঠিক সময়ে সংরক্ষণ না হওয়ায় প্রতি বছরই ১০-১৫ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয় বলে শিল্প সংশ্লিষ্টদের দাবি। এবারও সেই পুরনো চিত্রের পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে, সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন নতুন রোগ ও আর্থিক সংকটের চাপ।
এ অবস্থায় চামড়া শিল্পের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন ও ন্যায্য দামের নিশ্চয়তায় সরকারের পাশাপাশি খাতসংশ্লিষ্টদের সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন বিশ্লেষকরা। তা না হলে প্রতিবছর কোরবানির মৌসুমে চামড়াকে ঘিরে অস্থিরতা চলতেই থাকবে।