১৩ ডিসেম্বরের কনসার্ট কি আবারও বাতিল?
নিরাপত্তা ছাড়পত্র আটকে মানবিক উদ্যোগও ঝুলে—প্রশ্নে প্রশাসনের দ্বিমুখী নীতি
ঢাকায় আন্তর্জাতিক শিল্পীদের কনসার্ট ঘিরে আবারও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। আয়োজকরা জানিয়েছেন, ১৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানের জনপ্রিয় গায়ক আতিফ আসলামকে নিয়ে আয়োজিত কনসার্টের নিরাপত্তা ছাড়পত্র এখনো মেলেনি। ফলে অনুষ্ঠান বাতিলের শঙ্কা বাড়ছে। সাধারণ দর্শক ও সংগীতপ্রেমীদের মধ্যে এ পরিস্থিতি নিয়ে স্পষ্ট ক্ষোভ ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
মানবিক সহায়তা নিয়ে ঝুলে উদ্যোগ
কনসার্টটির আয় থেকে উল্লেখযোগ্য অংশ জুলাই আন্দোলনের শহীদ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তার জন্য বরাদ্দ করার পরিকল্পনা রয়েছে। আয়োজকদের তথ্য অনুযায়ী—
মোট আয়ের ৪০% প্রদান করা হবে “July Shaheed Smriti Foundation”-এ,
পাশাপাশি PUSAB জুলাই আন্দোলনের ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের পরিবারকে সহযোগিতা করবে।
দর্শকরা প্রশ্ন তুলছেন— “শহীদ পরিবারের সহায়তায় নিবেদিত একটি উদ্যোগও কি নিরাপত্তা জটিলতার অজুহাতে বাতিল হয়ে যাবে?”
একই শিল্পী, আলাদা অনুমতি—কেন নীতিগত বৈষম্য?
সাম্প্রতিক সময়ে ক্লাব ও করপোরেট ইভেন্টে দেশি–বিদেশি শিল্পীদের মুক্তভাবে পারফর্ম করতে দেখা গেলেও সাধারণ দর্শকের জন্য আয়োজিত বড় কনসার্টগুলো বাতিল হয়ে যাচ্ছে। এই বৈপরীত্য প্রশ্ন তুলছে—
জল ব্যান্ড: এক শো বাতিল হলেও পরদিন গুলশান ক্লাবে অনুষ্ঠান আয়োজন হয়েছে।
আলি আজমত: সাধারণ আয়োজনে অনিশ্চয়তা, কিন্তু করপোরেট ইভেন্টে নিয়মিত অংশগ্রহণ।
আতিফ আসলাম: ১৩ ডিসেম্বরের কনসার্ট ঝুলে থাকলেও ১৫ ডিসেম্বর AIUB-এর অনুষ্ঠান ও একাধিক ক্লাব শো অনুমতিপ্রাপ্ত।
দর্শকদের মন্তব্য— “নিরাপত্তা যদি সত্যিই সংকট হয়, তাহলে একই শিল্পীর অন্য ইভেন্টে নিরাপত্তা সমস্যা হয় না কেন?”
বাণিজ্য মেলায় নিরাপত্তা সম্ভব, কনসার্টে নয়—এ বৈপরীত্য কেন?
সরকার ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে যে আগামী ১ জানুয়ারি থেকে মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় লাখো মানুষের উপস্থিতি সত্ত্বেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
সমালোচকরা বলছেন— “বৃহৎ জনসমাগমের অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে, কয়েক হাজার দর্শকের একটি ইনডোর কনসার্ট কেন ঝুলে থাকবে?”
আয়োজক ও প্রশাসনের নীরবতা প্রশ্ন বাড়াচ্ছে
আয়োজক প্রতিষ্ঠান এখনো নিরাপত্তা ছাড়পত্র বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। প্রশাসনের দায়িত্বশীল সূত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এই নীরবতা সাধারণ দর্শকের মধ্যে অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
নির্বাচনপূর্ব নিরাপত্তা সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন
বিশ্লেষকদের মতে, “একটি নিয়ন্ত্রিত ইনডোর কনসার্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই যদি প্রশাসন সিদ্ধান্তহীনতায় পড়ে, তাহলে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বৃহৎ নিরাপত্তা প্রস্তুতি কতটা কার্যকর হবে—সাধারণ মানুষের মনে সে নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হবে।”
দর্শকের দাবি—দ্রুত স্বচ্ছ ঘোষণা
দর্শক, আয়োজক এবং শহীদ পরিবারে সহায়তায় যুক্ত সংগঠনগুলো তিনটি মূল দাবি জানাচ্ছে— ১৩ ডিসেম্বরের কনসার্টের নিরাপত্তা ছাড়পত্র দ্রুত ও স্বচ্ছভাবে ঘোষণা করতে হবে, মানবিক উদ্যোগ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা নীতির সমান প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
নিরাপত্তা ও অনুমতি নিয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা না আসা পর্যন্ত কনসার্টটি অনুষ্ঠিত হবে কি না—তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে যাচ্ছে।



























