সোমবার ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২ কার্তিক ১৪৩২

ইমরানুল আজিম চৌধুরী

প্রকাশিত: ০৮:৫৯, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

মানবতার কষ্টিপাথর: শিক্ষাঙ্গনে একুশ শতকের মর্মপীড়া

মানবতার কষ্টিপাথর: শিক্ষাঙ্গনে একুশ শতকের মর্মপীড়া
ছবি: সংগৃহীত

রাষ্ট্রের অর্থ, জনগণের স্বপ্ন—বিনিময়ে যে জ্ঞানালোকে জ্বলে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায়, সে তো কেবল ইমারত বা বইয়ের স্তূপ নয়, এক সুদূরপ্রসারী অঙ্গীকার। কথা ছিল, এই বিদ্যাতীর্থ হবে মানবিকতার বাতিঘর, যেখানে বিবেকের কারুকাজ হবে সবচেয়ে উজ্জ্বল। কিন্তু আজ?

ঐতিহ্যের পাতায় লেখা আছে—এই বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রের সম্পদ, আর এর প্রতিটি ছাত্র জ্ঞান ও প্রজ্ঞার বাহক। অথচ, কী নিদারুণ বৈপরীত্যের চিত্র আজ আঁকা হচ্ছে! যে তরুণ-তরুণীরা একদিন রাজপথে দাঁড়িয়েছিল ন্যায় ও সাম্যের ঝাণ্ডা হাতে, তারাই আজ নিজেদের শিক্ষাঙ্গনকে ‘বিশুদ্ধ’ করার নামে গৃহহীন মানুষের শেষ আশ্রয়টুকু কেড়ে নিচ্ছে। উদ্বাস্তু, ছিন্নমূল—যারা সমাজেরই প্রতিচ্ছবি, যাদের জীবন কাটে খোলা আকাশের নিচে, তাদের উচ্ছেদ-উল্লাসে মেতেছে একদল শিক্ষার্থী।

ধিক্কার! এই শিক্ষাকে, যা হৃদয়কে পাষাণ করে তোলে! এ কেমন জ্ঞানার্জন, যা অপরের কান্না শুনতে পায় না? যে চোখ তার চারপাশে থাকা দুস্থের বেদনা দেখতে অক্ষম, সে চোখ তো কেবল অক্ষর দেখে, মনুষ্যত্বের মহিমা বোঝে না। রাষ্ট্রের টাকায় গড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠান, যার মূল ভিত্তিই হলো জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা, আজ সেই জনগণের একটি অংশকে বর্জন করছে।

আমাদের মহান শিক্ষকেরা স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন—শিক্ষা হবে আলোকবর্তিকা, যা অন্ধকার দূর করবে। কিন্তু এই উচ্ছেদ-অভিযান যেন সেই আলোকেই ঢেকে দিচ্ছে এক অমানবিক ছায়ায়। প্রশ্ন জাগে, তবে কি আমাদের শিক্ষা কেবলই সার্টিফিকেটসর্বস্ব? মানবিকতার পাঠ কি তবে শুধুই বইয়ের শুকনো পাতায় সীমাবদ্ধ?

আসুন, এই মুহূর্তে আমরা সবাই নিজেদের প্রশ্ন করি—একটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পবিত্রতা কি কেবল এর পরিচ্ছন্নতা বা সৌন্দর্য দিয়ে মাপা যায়? নাকি এর আসল পবিত্রতা নিহিত, অসহায় মানুষের প্রতি এর মমত্ববোধের গভীরতায়?

স্মরণ করি সেই বাণী—“মানুষের তরে মানুষ।” যে শিক্ষা মানুষকে মানুষ হতে শেখায় না, তা কেবলই ভার বহন করা মাত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, তোমরা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান—তোমাদের হাতেই ভবিষ্যতের মশাল। উচ্ছেদের অস্ত্র ফেলে দাও, আশ্রয় দাও ভালোবাসার; এই উদ্বাস্তু মানুষগুলোকে পুনর্বাসনের আন্দোলনে কণ্ঠ মিলাও। তবেই তোমাদের অর্জিত জ্ঞান সার্থক হবে, তবেই এই ‘রাষ্ট্রের সম্পদ’ নামের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকবে।

নইলে জেনে রেখো, এই অমানবিকতার ইতিহাস তোমাদের নামের পাশে ‘অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন পাষাণ’ হিসেবেই চিহ্নিত করে রাখবে। হৃদয় ছুঁয়ে দেখো, তবেই পাবে প্রকৃত শিক্ষার সন্ধান।

জনপ্রিয়